পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃõ রবীন্দ্র-রচনাবলী سb গোলমাল ঘোরাফেরা দেখাশোনা বলাকওয়া নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণের ফাকে ফাকে যখন-তখন দু-চার লাইন করে লিখি, ভাবের স্রোত আটকে আটকে যায়, তার সহজ গতিটা থাকে না। একে চিঠি বলা চলে না। কেননা, এর ভিতরে ভিতরে কর্তব্যপরায়ণতার ঠেলা চলছে – সেটাতে কাজকে এগিয়ে দেয়, ভাবকে হয়রান করে । পাখি-ওড়ায় আর ঘুড়ি-ওড়ায় তফাত আছে। আমি ওড়াচ্ছি চিঠির ছলে লেখার ঘুড়ি, কর্তব্যের লাঠাইয়ে বাধা, কেবলই হেঁচকে হেঁচকে ওড়াতে হয় । ক্লাস্ত হয়ে পড়েছি। দিনের মধ্যে দু-তিনরকমের প্রোগ্রাম। নতুন নতুন জায়গায় বক্তৃতা নিমন্ত্রণ ইত্যাদি। গীতার উপদেশ যদি মানতুম, ফললাভের প্রত্যাশা যদি না থাকত, তা হলে পাল-তোলা নৌকার মতো জীবনতরণী তীর থেকে তীরাস্তরে নেচে নেচে যেতে পারত। চলেছি উজান বেয়ে, গুন টেনে, লগি ঠেলে, দাড় বেয়ে ; পদে পদে জিব বেরিয়ে পড়ছে। আমৃত্যুকাল কোনোদিন কোথাও-যে সহজে ভ্রমণ করতে পারব সে আশা বিড়ম্বন । পথ সুদীর্ঘ, পাথেয় স্বল্প ; অর্জন করতে করতে গর্জন করতে করতে, হোটেলে হোটেলে ডলার বর্জন করতে করতে, আমার ভ্রমণ— গলা চালিয়ে আমার পা চালানো । পথে বিপথে যেখানে-সেখানে আচমকা আমাকে বক্তৃতা করতে বলে, আমিও উঠে দাড়িয়ে বকে যাই – আমেরিকায় মুড়ি তৈরি করবার কলের মুখ থেকে যেমন মুড়ি বেরোতে থাকে সেইরকম । হাসিও পায় দুঃখও ধরে। পৃথিবীর পনেরো-আনা লোক কবিকে নিয়ে সর্বসমক্ষে এইরকম অপদস্থ করতেই ভালোবাসে ; বলে, “মেসেজ দাও।” মেসেজ বলতে কী বুঝায় সেটা ভেবে দেখো । সর্বসাধারণ-নামক নিবিশেষ পদার্থের উদাসীন কানের কাছে অত্যন্ত নিবিশেষ ভাবের উপদেশ দেওয়া, যা কোনো বাস্তব মামুষের কোনো বাস্তব কাজেই লাগে না । পরলোকগত বহুসংখ্যক পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে পাইকেরি প্রথায় পিণ্ডি দেওয়ার মতো— যেহেতু সে-পিণ্ড কেউ খায় না সেই জন্যে তাতে না আছে স্বাদ, না আছে শোভা । যেহেতু সেটা রসনাহীন ও ক্ষুধাহীন নামমাত্রের জন্ত উৎসর্গ-করা সেই জন্তে সেটাকে যথার্থ খাদ্য করে তোলার জন্তে কারো গরজ নেই। মেসেজ-রচনা সেইরকম রচনা । আজ বিকেলের গাড়িতে পিনাঙ যেতে হবে। তার আগে, যদি স্বসাধ্য হয় তবে নাওয়া আছে, খাওয়া আছে ; যদি দুঃসাধ্য হয় তবু একটা মিটিঙে গিয়ে বক্তৃতা আছে ; ঘুম নেই, বিশ্রাম নেই, শাস্তি নেই, অবকাশ নেই– তার পরে স্বদীর্ঘ রেলযাত্রা, তার পরে