পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ ब्रशैव-जानांदगौ অনেকগুলি কাপড় সাজানো। তার মধ্যে থেকে আমাকে তিনটি কাপড় পছন্দ করে নিতে আহ্বরোধ করলেন। সেইসঙ্গে আমার দলের প্রত্যেককে একটি একটি করে এই মূল্যবান কাপড় দান করলেন। কাপড়ের উপর এইরকম শিল্পকাজ করতে দু-তিন মাস করে লাগে। রাজবাড়ির পরিচারিকারাই এই কাজে স্থনিপুণ । এই রাজবংশীয়দের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পরিবারের ধারা, কাল রাত্রে তাদের ওখানে নিমন্ত্রণ ছিল । তার ওখানে রাজকায়দার যতরকমের উপসর্গ। যেমন দুই সারস পাখি পরম্পরকে ঘিরে ঘিরে নানা গভীর ভঙ্গীতে নাচে দেখেছি, এখানকার রেসিডেন্‌টু আর এই রাজা পরস্পরকে নিয়ে সেইরকম রাজকীয় চাল বিস্তার করতে লাগলেন । রাজা কিম্বা রাজপুরুষদের একটা পদোচিত মর্যাদা বাইরের দিক থেকে রক্ষা করে চলতে হয় মানি ; তাতে সেইসব মানুষের সামান্তত কিছু ঢাকাও পড়ে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করলে তাতে তাদের সাধারণতাকেই হাস্যকরভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়। কাল রাত্রে যে-নাচ হল সে ন’জন মেয়েতে মিলে। তাতে যেমন নৈপুণ্য তেমনি সৌন্দর্য, কিন্তু দেখে মনে হল, কাল রাত্রের সেই নাচে স্বত-উচ্ছ্বসিত প্রাণের উৎসাহ ছিল না ; যেন এরা ক্লাস্ত, কেবল অভ্যাসের জোরে নেচে যাচ্ছে । কালকের নাচে গুণপনা যথেষ্ট ছিল কিন্তু তেমন করে মনকে স্পর্শ করতে পারে নি। রাজার একটি . ছেলে পাশে বসে আমার সঙ্গে আলাপ করছিলেন, তাকে আমার বড়ো ভালো লাগল। অল্প বয়স, দুই বছর হল্যাণ্ডে শিক্ষা পেয়েছেন, ওলন্দাজ গবর্নমেণ্টের সৈনিকবিভাগে প্রধান পদে নিযুক্ত। তার চেহারায় ও ব্যবহারে স্বাভাবিক অাকর্ষণীশক্তি আছে। কাল রাত্রে আমাদের এখানেও একটা নাচ হয়ে গেল। পূর্বরাত্রে যে-দুজন বালিকা নেচেছিল তাদের মধ্যে একজন আজ পুরুষ-সঙের মুখোশ পরে সঙের নাচ নাচলে। আশ্চর্য ব্যাপারটা হচ্ছে, এর মধ্যে নাচের শ্ৰী সম্পূর্ণ রক্ষা করেও ভাবেভঙ্গীতে গলার আওয়াজে পুরোমাত্রায় বিদূষকতা করে গেল। পুরুষের মুখোশের সঙ্গে তার অভিনয়ের কিছুমাত্র অসামঞ্জস্ত হল না। বেশভূষার সৌন্দর্বেও একটুমাত্র ব্যত্যয় হয় নি। নাচের শোভনতাকে বিকৃত না করেও ষে তার মধ্যে ব্যঙ্গবিদ্রুপের রস এমন করে আনা যেতে পারে, এ আমার কাছে আশ্চর্য ঠেকল । এরা প্রধানত নাচের ভিতর দিয়েই সমস্ত হৃদয়ভাব ব্যক্ত করতে চায়, সুতরাং বিক্রপের মধ্যেও এরা ছন্দ রাখতে বাধ্য। এরা বিন্দ্রপকেও বিরূপ করতে পারে না ; এদের রাক্ষসেরাও নাচে । ইতি ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৭১ ১ খ্ৰীমতী প্রতিমা দেবীকে লিখিত।