পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ >>ማ আমার সীমস্ত হইতে পদাঙ্গুলি পর্যন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যতকিছু ভূষণ ছিল সমস্ত কাপড়ে বাধিয়া আমার হিন্দু দাসী দিয়া গোপনে কেশরলালের নিকট পঠাইয়া দিলাম। তিনি গ্রহণ করিলেন। আনন্দে আমার ভূষণবিহীন প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুলকে রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল। কেশরলাল মরিচাপড় বন্দুকের চোঙ এবং পুরাতন তলোয়ারগুলি মজিয়া ঘষিয়া সাফ করিতে প্রস্তুত হইলেন, এমন সময় হঠাৎ একদিন অপরাহ্লে জিলার কমিশনার সাহেব লালকুর্তি গোর লইয়া আকাশে ধুলা উড়াইয়া আমাদের কেল্লার মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। অামার পিতা গোলামকণদের খা গোপনে তাহাকে বিদ্রোহুসংবাদ দিয়াছিলেন । বভ্রাওনের ফৌজের উপর কেশরলালের এমন একটি অলৌকিক আধিপত্য ছিল যে, তার কথায় তাহারা ভাঙা বন্দুক ও ভেঁাতা তরবারি হস্তে লড়াই করিয়া মরিতে প্রস্তুত হইল । বিশ্বাসঘাতক পিতার গৃহ আমার নিকট নরকের মতো বোধ হইল। ক্ষোভে দুঃখে লজ্জার ঘৃণায় বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল, তবু চোখ দিয়া এক ফোট জল বাহির হইল না। আমার ভীরু ভ্রাতার পরিচ্ছদ পরিয়া ছদ্মবেশে অন্তঃপুর হইতে বাহির হইয়া গেলাম, কাহারো দেখিবার অবকাশ ছিল না । তখন ধুলা এবং বারুদের ধোয়া, সৈনিকের চিৎকার এবং বন্দুকের শব্দ থামিয়া গিয়া মৃত্যুর ভীষণ শাস্তি জলস্থল-আকাশ আচ্ছন্ন করিয়াছে। যমুনার জল রক্তরাগে রঞ্জিত করিয়া স্বৰ্ষ অস্ত গিয়াছে, সন্ধ্যাকাশে শুক্লপক্ষের পরিপূর্ণপ্রায় চন্দ্ৰমা । , রণক্ষেত্র মৃত্যুর বিকট দৃশ্যে আকীর্ণ। অন্য সময় হইলে করুণায় আমার বক্ষ ব্যথিত হইয়া উঠিত, কিন্তু সেদিন স্বপ্নাবিষ্ট্রের মতো আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম, খুজিতেছিলাম কোথায় আছে কেশরলাল, সেই একমাত্র লক্ষ্য ছাড়া আর সমস্ত আমার নিকট অলীক বোধ হইতেছিল। খুজিতে খুজিতে রাত্রি দ্বিগ্রহরে উজ্জল চন্দ্রালোকে দেখিতে পাইলাম, রণক্ষেত্রের অদূরে যমুনাতীরের আম্রকাননচ্ছায়ায় কেশরলাল এবং তাহার ভক্তস্তৃত্য দেওকিনন্দনের মৃতদেহ পড়িয়া আছে। বুঝিতে পারিলাম, সাংঘাতিক আহত অবস্থায়, হয় প্ৰভু ভৃত্যকে অথবা তৃত্য প্রভুকে রণক্ষেত্র হইতে এই নিরাপদ স্থানে বহন করিয়া আনিয়া শাস্তিতে মৃত্যুহন্তে আত্মসমর্পণ করিয়াছে। প্রথমেই আমি আমার বহুদিনের বুভূক্ষিত ভক্তিবৃত্তির চরিতার্থত৷ সাধন করিলাম। কেশরলালের পদতলে লুষ্ঠিত হইয়া পড়িয়া আমার জাজাকুলৰিত কেশজাল উন্মুক্ত