পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ هـه २०3 কোনোমতেই শেষ হয় না। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ভাঙা হিন্দিতে বলিলাম, “বেয়াদপি মাপ করিবেন, শেষদিককার কথাটা আর অল্প একটু খোলসা করিয়া বলিলে অধীনের মনের ব্যাকুলতা অনেকটা হ্রাস হয়।” নবাবপুত্রী হাসিলেন। বুঝিলাম, আমার ভাঙা হিনিতে ফল হইয়াছে। যদি আমি খাল হিন্দিতে বাৎ চালাইতে পারিতাম তাহা হইলে আমার কাছে র্তাহার লজ্জা ভাঙিত না, কিন্তু আমি যে র্তাহার মাতৃভাষা অতি অল্পই জানি সেইটেই আমাদের উভয়ের মধ্যে বৃহৎ ব্যবধান, সেইটেই একটা আক্ৰ । তিনি পুনরায় আরম্ভ করিলেন, “কেশরলালের সংবাদ আমি প্রায়ই পাইতাম কিন্তু কোনোমতেই তাহার সাক্ষাৎ লাভ করিতে পারি নাই । তিনি তাতিয়াটোপির দলে মিশিয়া সেই বিপ্লবাচ্ছন্ন আকাশতলে অকস্মাৎ কখনো পূর্বে, কখনো পশ্চিমে, কখনো ঈশানে, কখনো নৈঋতে, বজ্রপাতের মতো মুহূর্তের মধ্যে ভাঙিয়া পড়িয়া, মুহূর্তের মধ্যে অদৃপ্ত হইতেছিলেন। আমি তখন ষোগিনী সাজিয়া কাশীর শিবানন্দস্বামীকে পিতৃসম্বোধন করিয়া তাহার নিকট সংস্কৃত শাস্ত্র অধ্যয়ন করিতেছিলাম । ভারতবর্ষের সমস্ত সংবাদ তাহার পদতলে আসিয়া সমাগত হইত, আমি ভক্তিভরে শাস্ত্র শিক্ষা করিতাম এবং মর্মান্তিক উদবেগের সহিত যুদ্ধের সংবাদ সংগ্ৰহ করিতাম। | ক্রমে ব্রিটিশরাজ হিন্দুস্থানের বিদ্রোহবহ্নি পদতলে দলন করিয়া নিবাইয়া দিল । তখন সহসা কেশরলালের সংবাদ আর পাওয়া গেল না । ভীষণ প্রলয়ালোকের রক্ত রশ্মিতে ভারতবর্ষের দূরদূরাস্তর হইতে যে-সকল বীর-স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে দেখা যাইতেছিল, হঠাৎ তাহারা অন্ধকারে পড়িয়া গেল । Ç তখন আমি আর থাকিতে পারিলাম না। গুরুর আশ্রয় ছাড়িয়া ভৈরবীবেশে আবার বাছির হইয়া পড়িলাম। পথে পথে, তীর্থে তীর্থে, মঠে মন্দিরে ভ্রমণ করিয়াছি, কোথাও কেশরলালের কোনো সন্ধান পাই নাই। দুই-একজন যাহারা তাহার নাম জানিত, কহিল, ‘লে হয় যুদ্ধে নয় রাজদণ্ডে মৃত্যু লাভ করিয়াছে। আমার অন্তরাত্মা কহিল, কখনো নহে, কেশরলালের মৃত্যু নাই – সেই ব্রাহ্মণ সেই দুঃসহ জলদ্বগ্নি কখনো নির্বাণ পায় নাই, আমার আত্মাহুতি গ্রহণ করিবার জন্য সে এখনো কোন দুর্গম নির্জন যজ্ঞবেদীতে উৰ্ব্বশিখা হইয়া জলিতেছে।’ হিন্দুশাস্ত্ৰে আছে জ্ঞানের দ্বারা তপস্তার দ্বারা সূত্র ব্রাহ্মণ হইয়াছে, মুসলমান