পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

தறி গল্পগুচ্ছ See তখন একটি ফুৎকারেই নিবিয়া যায়, সে কথা আর স্বদীর্ঘ করিয়া কী ব্যাখ্যা করিব । আটত্রিশ বৎসর পরে এই দ্বাজিলিঙে আসিয়া আজ প্রাতঃকালে কেশরলালের দেখা পাইয়াছি।” বক্তাকে এইখানে ক্ষাস্ত হইতে দেখিয়া আমি ঔৎস্থক্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম, “কী দেখিলেন ।” _: r নবাবপুত্ৰী কছিলেন, “দেখিলাম, বৃদ্ধ কেশরলাল ভূটিয়াপল্লীতে ভুটিয়া স্ত্রী এবং তাহার গর্ভজাত পৌত্রপৌত্রী লইয়া মানবন্ত্রে মলিন অঙ্গনে ভুট্টা হইতে শস্ত সংগ্ৰহ করিতেছে।” গল্প শেষ হইল। আমি ভাবিলাম, একটা সান্ধনার কথা বলা আবশ্যক । কছিলাম, “আটত্রিশ বংলর একাদিক্রমে যাহাকে প্রাণভয়ে বিজাতীয়ের সংস্রবে অহরহ থাকিতে হইয়াছে সে কেমন করিয়া আপন আচার রক্ষা করিবে।” নবাবকস্ত কহিলেন, “আমি কি তাহা বুঝি না। কিন্তু এতদিন আমি কী মোহ লইয়া ফিরিতেছিলাম ! যে ব্রহ্মণ্য আমার কিশোর হৃদয় হরণ করিয়া লইয়াছিল আমি কি জানিতাম, তাহা অভ্যাস তাহ সংস্কার মাত্র । আমি জানিতাম, তাহ ধর্ম, তাহা অনাদি অনন্ত । তাহাই যদি না হইবে তবে ষোলোবৎসর বয়সে প্রথম পিতৃগৃহ হইতে বাহির হইয়া সেই জ্যোৎস্নানিশীথে আমার বিকশিত পুষ্পিত ভক্তিবেগকম্পিত দেহমনপ্রাণের প্রতিদানে ব্রাহ্মণের দক্ষিণ হস্ত হইতে যে দুঃসহ অপমান প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, কেন তাহা গুরুহস্তের দীক্ষার স্তায় নিঃশব্দে অবনত মস্তকে দ্বিগুণিত ভক্তিভরে শিরোধার্য করিয়া লইয়াছিলাম। হায় ব্রাহ্মণ, তুমি তো তোমার এক অভ্যাসের পরিবর্তে আর এক অভ্যাস লাভ করিয়াছ, আমি আমার এক যৌবন এক জীবনের পরিবর্তে আর-এক জীবন যৌবন কোথায় ফিরিয়া পাইব ।” এই বলিয়া রমণী উঠিয়া দাড়াইয়া কছিল, "নমস্কার বাবুজি ।” মুহূর্তপরেই যেন সংশোধন করিয়া কহিল, "সেলাম বাবুলাহেব !” এই মুসলমানঅভিবাদনের দ্বারা লে যেন জীর্ণভিত্তি ধূলিশায়ী ভগ্ন ব্ৰহ্মণ্যের নিকট শেষ বিদায় গ্রহণ করিল। আমি কোনো কথা না বলিতেই লে সেই হিমাত্রিশিখরের ধূসর কুঙ্কটিকারাশির মধ্যে মেঘের মতো মিলাইয়া গেল। আমি ক্ষণকাল চক্ষু মুজিত করিয়া সমস্ত ঘটনাবলী মানসপটে চিত্রিত দেখিতে