পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وی eج কর্মফলের গুরুত্ব বোঝা অল্প বয়সের কর্ম নহে। কুহুম মনে করিত, এ একটা বেশ মজা হইতেছে, এবং মজাট ক্রমে ষোলো-আনায় সম্পূর্ণ হইয় উঠে ইহাতে তাহার একটা আগ্রহ ছিল। ভালোবাসার নবান্ধুরে গোপনে জলসিঞ্চন তরুণীদের পক্ষে বড়ো কৌতুকের । বিনোদারও মন্দ লাগিল না। হৃদয়জয়ের স্বতীয় ক্ষমতাটা একজন পুরুষ মানুষের উপর শাণিত করিবার ইচ্ছা অন্যায় হইতে পারে, কিন্তু নিতান্ত অস্বাভাবিক নহে। এইরূপে তাসের হারজিৎ ও ছক্কাপাঞ্জার পুনঃপুন আবর্তনের মধ্যে কোন এক সময়ে দুইটি খেলোয়াড়ের মনে মনে মিল হইয়া গেল, অন্তৰ্বামী ব্যতীত আর-একজন খেলোয়াড় তাহ দেখিল এবং আমোদ বোধ করিল। একদিন দুপুরবেলায় বিনোদ কুসুম ও নগেন্দ্র তাল খেলিতেছিল। কিছুক্ষণ পরে কুষম তাহার রুগণ শিশুর কান্না শুনিয়া উঠিয়া গেল। নগেন্দ্র বিনোদার সহিত গল্প করিতে লাগিল। কিন্তু কী গল্প করিতেছিল তাহা নিজেই বুঝিতে পারিতেছিল না ; রক্তস্রোত তাহার হৃৎপিণ্ড উদবেলিত করিয়া তাহার সর্বশরীরের শিরার মধ্যে তরঙ্গিত হইতেছিল। * হঠাৎ একসময় তাহার উদাম যৌবন বিনয়ের সমস্ত বাধ ভাঙিয়া ফেলিল, হঠাৎ বিনোদার হাত দুটি চাপিয়া ধরিয়া সবলে তাহাকে টানিয়া লইয়া চুম্বন করিল। বিনোদা নগেন্দ্র-কর্তৃক এই অবমাননায় ক্রোধে ক্ষোভে লজ্জায় অধীর হইয়া নিজের হাত ছাড়াইবার জন্য টানাটানি করিতেছে এমন সময় তাহাদের দৃষ্টিগোচর হইল, ঘরে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন হইয়াছে। নগেন্দ্র নতমুখে ঘর হইতে বাহির হইবার পথ অন্বেষণ করিতে লাগিল । পরিচারিক গম্ভীরস্বরে কহিল, “বউঠাকরুন, তোমাকে পিসিমা ডাকছেন।” বিনোদ ছলছল চক্ষে নগেন্দ্রের প্রতি বিদ্যুৎকটাক্ষ বর্ষণ করিয়া দাসীর সঙ্গে চলিয়া গেল । পরিচারিক যেটুকু দেখিয়াছিল তাহাকে হ্রস্ব এবং যাহা না দেখিয়াছিল তাহাকেই স্বদীর্ঘতর করিয়া বৈদ্যনাথের অন্তঃপুরে একটা বড় তুলিয়া দিল। বিনোদার কী দশা হইল সে কথা বর্ণনার অপেক্ষ কল্পনা সহজ। সে যে কতদূর নিরপরাধ কাহাকেও বুঝাইতে চেষ্টা করিল না, নতমুখে সমস্ত সহিয়া গেল । বৈদ্যনাথ আপন ভাৰী পিণ্ডদাতার আবির্ভাবসম্ভাবনা অত্যন্ত সংশয়াচ্ছন্ন জ্ঞান করিয়া বিনোদাকে কহিল, "কলম্বিনী, তুই আমার ঘর হইতে দূর হইয়া বা " । বিনোদ শয়নকক্ষের দ্বার রোধ করিয়া বিছানায় শুইয়া পড়িল, তাহার অশ্রুহীন