পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী উড়ে বেহারার স্বন্ধে চাপিয়া সমুচ্চ হাই-হাই শব্দে অত্যন্ত অনায়ালে সহজভাবে প্রবেশ করিতেছে কল্পনা করিয়া আমার সর্বশরীরে অপূর্ব পুলকসঞ্চার হইল । আমি আর অধিক বিলম্ব করিতে পারিলাম না। অনতিকাল পরে ধীরে ধীরে সিড়ি বাহিয়া দোতলায় উঠিলাম। ইচ্ছা ছিল গোপনে লুকাইয়া দেখিয়া শুনিয়া লইব, কিন্তু তাহা ঘটিল না ; কারণ, সিড়ির সম্মুখবর্তী ঘরেই সিড়ির দিকে মুখ করিয়া মন্মথ বসিয়াছিল, এবং গৃহের অপর প্রান্তে বিপরীতমুখে একটি অবগুষ্ঠিত নারী বলিয়া মুছম্বরে কথা কহিতেছিল। যখন দেখিলাম মন্মথ আমাকে দেখিতে পাইয়াছে, তখন দ্রুত ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই বলিলাম, “ভাই, আমার ঘড়িটা ঘরে ফেলিয়া আসিয়াছি, তাই লইতে আসিলাম।” মন্মথ এমনি অভিভূত হইয়া পড়িল যে, বোধ হইল যেন তখনই সে মাটিতে পড়িয়া যাইবে । আমি কৌতুক এবং আনন্দে নিরতিশয় ব্যগ্র হইয়া উঠিলাম ; বলিলাম, “ভাই, তোমার অসুখ করিয়াছে না কি ” সে কোনো উত্তর দিতে পারিল না। তখন সেই কাষ্ঠপুত্তলিকণবং আড়ষ্ট অবগুষ্ঠিত নারীর দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, "আপনি মন্মথর কে হন ।” কোনো উত্তর পাইলাম না, কিন্তু দেখিলাম তিনি মন্মথর কেহই হন না, আমারই স্ত্রী হন । তাহার পর কী হইল সকলে জানেন । এই আমার ডিটেকটিভ-পদের প্রথম চোর ধরা। আমি কিয়ৎক্ষণ পরে ডিটেকটিভ মহিমচন্দ্রকে কহিলাম, “মন্মথর সহিত তোমার স্ত্রীর সম্বন্ধ সমাজবিরুদ্ধ না হইতেও পারে।” মহিম কহিল, “না হইবারই সম্ভব । আমার স্ত্রীর বাক্স হইতে মন্মথর এই চিঠিখানি পাওয়া গেছে।” বলিয়া একখানি চিঠি আমার হাতে দিল ; সেখানি নিম্নে প্রকাশিত হইল— স্বচরিতাস্ক, হতভাগ্য মন্মথের কথা তুমি বোধ করি এতদিনে ভুলিয়া গিয়াছ। বাল্যকালে যখন কাজিবাড়ির মাতুলালয়ে যাইতাম, তখন সর্বদাই সেখান হইতে তোমাদের বাড়ি গিয়া তোমার সহিত অনেক খেলা করিয়াছি। আমাদের সে খেলাঘর এবং সে খেলার সম্পর্ক ভাঙিয়া গেছে। তুমি জান কি না বলিতে পারি না, একসময় ধৈর্ধের বঁtধ ভাঙিয়া এবং লজ্জার মাথা খাইয়া তোমার সহিত আমার বিবাহের সম্বন্ধ-চেষ্টাও করিয়াছিলাম, কিন্তু আমাদের বয়স প্রায় এক বলিয়া উভয় পক্ষেরই কর্তারা কোনোক্রমে রাজি হইলেন না । তাহার পর তোমার বিবাহ হইয়া গেলে চার-পাচ বংলর তোমার আর কোনো