পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ফেলিয়া আমার বন্ধু ট্রামে চড়িয়া তাহার কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের বাসায় চলিয়া গেল, আমি গঙ্গার ধারে ফরাসডাঙার বাগানে অমর কীর্তি অক্ষয় গৌরব উপার্জন করিতে গেলাম । o গঙ্গার ধারে নির্জন ঘরে চিত হইয়া শুইয়া বিশ্বজনীন প্রেমের কথা ভাবিতে ভাবিতে মধ্যাহ্নে প্রগাঢ় নিজাবেশ হুইত, একেবারে অপরাহ্লে পাচটার সময় জাগিয়া উঠিতাম। তাহার পর শরীর-মনটা কিছু অবসাদগ্ৰস্ত হইয়া থাকিত ; কোনোমতে চিত্তবিনোদন ও সময়ষাপনের জন্য বাগানের পশ্চান্ধিকে রাজপথের ধারে একটা ছোটাে কাষ্ঠাসনে বসিয়া চুপচাপ করিয়া গোরুর গাড়ি ও লোক-চলাচল দেখিতাম । নিতান্ত অসহ্য হইলে স্টেশনে গিয়া বলিতাম, টেলিগ্রাফের কাটা কটুকটু শব্দ করিত, টিকিটের ঘণ্টা বাজিত, লোকসমাগম হইত, রক্তচক্ষু সহস্রপদ লৌহসরীস্বপ ফুযিতে ফুষিতে আসিত, উৎকট চীৎকার করিয়া চলিয়া যাইত, লোকজনের হুড়ামুড়ি পড়িত, কিয়ৎক্ষণের জন্য কৌতুকবোধ করিতাম। বাড়ি ফিরিয়া, আহার করিয়া, সঙ্গী অভাবে সকাল-সকাল শুইয়া পড়িতাম, এবং প্রাতঃকালে সকাল-সকাল উঠিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন না থাকাতে বেলা আট-নয়ট পর্যন্ত বিছানায় যাপন করিতাম। শরীর মাটি হইল, বিশ্বপ্রেমেরও কোনো অন্ধিলন্ধি খুজিয়া পাইলাম না । কোনোকালে এক থাকা অভ্যাস না থাকাতে সঙ্গীহীন গঙ্গাতীর শূন্ত শ্মশানের মতে বোধ হইতে লাগিল , অমূল্যটাও এমনি গর্দভ যে, একদিনের জন্যও সে আপন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিল না । ইতিপূর্বে কলিকাতায় বসিয়া ভাবিতাম, বিপুলচ্ছায়া বটবৃক্ষের তলে পা ছড়াইয়া বসিব, পদপ্রাস্তে কলনদিনী স্রোতস্বিনী আপন-মনে বহিয়া চলিবে— মাঝখানে স্বপ্নাবিষ্ট কবি, এবং চারি দিকে তাহার ভাবরাজ্য ও বহিঃপ্রকৃতি— কাননে পুপ, শাখায় বিহঙ্গ, আকাশে তারা, মনের মধ্যে বিশ্বজনীন প্রেম এবং লেখনীমুখে অশ্রান্ত । অজস্র ভাবস্রোত বিচিত্র ছন্দে প্রবাহিত । কিন্তু কোথায় প্রকৃতি এবং কোথায় প্রকৃতির কবি, কোথায় বিশ্ব আর কোথায় বিশ্বপ্রেমিক ! একদিনের জন্তও বাগানে বাহির হই নাই। কাননের ফুল কাননে ফুটিত, আকাশের তারা আকাশে উঠিত, বটবৃক্ষের ছায়া বটবৃক্ষের তলে পড়িত, আমিও ঘরের ছেলে ঘরেই পড়িয়া থাকিতাম । 血 আত্মমাহাত্ম্য কিছুতেই প্রমাণ করিতে না পারিয়া বামাচরণের প্রতি আক্রোশ বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । সে সময়টাতে বাল্যবিবাহ লইয়া বাঙলার শিক্ষিতসমাজে একটা বাগযুদ্ধ