পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ९२> পরদিনে আমি জার থাকিতে পারিলাম না । প্রাতঃকালে আমার প্রতিবেশীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলাম। ভবনাথবাবু তখন বড়ো এক পেয়াল চা পাশে রাখিয়া চোখে চশমা দিয়া নীলপেন্সিলে-দাগ-করা একখানা হ্যামিলটনের পুরাতন পুথি মনোযোগ দিয়া পড়িতেছিলেন। আমি ঘরে প্রবেশ করিলে চশমার উপরিভাগ হইতে আমাকে কিয়ৎক্ষণ অন্তমনস্কভাবে দেখিলেন, বই হইতে মনটাকে এক মুহুর্তে প্রত্যাহরণ করিতে পারিলেন না। অবশেষে অকস্মাৎ সচকিত হইয়া ত্ৰস্তভাৰে আতিথ্যের জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠিলেন । আমি সংক্ষেপে আত্মপরিচয় দিলাম। তিনি এমনি শশব্যস্ত হইয়া উঠিলেন যে চশমার খাপ খুজিয়া পাইলেন না। খামক বলিলেন, “আপনি চা খাইবেন ?” আমি যদিচ চ খাই না, তথাপি বলিলাম, “আপত্তি নাই।” ভবনাথবাবু ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কিরণ কিরণ বলিয়া ডাকিতে লাগিলেন। দ্বারের নিকট অত্যন্ত মধুর শব্দ শুনিলাম, “ৰী, বাবা।” ফিরিয়া দেখিলাম, তাপসকশ্বন্ধুহিত। সহসা আমাকে দেখিয়া ত্রস্ত হরিণীর মতো পলায়নোস্থ্যতা হইয়াছেন । ভবনাথবাবু তাহাকে ফিরিয়া ডাকিলেন ; আমার পরিচয় দিয়া কছিলেন, “ইনি আমাদের প্রতিবেশী মহীন্দ্রকুমার বাৰু।” এবং আমাকে কহিলেন, “ইনি আমার কন্যা কিরণবালা ।” আমি কী করিব ভাবিয়া পাইতেছিলাম না, ইতিমধ্যে কিরণ আমাকে আনভ্রম্বন্দর নমস্কার করিলেন । আমি তাড়াতাড়ি ক্রটি সারিয়া লইয়া তাহা শোধ করিয়া দিলাম । ভবনাথবাবু কছিলেন, "ম, মহীন্দ্রবাবুর জন্য এক পেয়াল চা আনিয়া দিতে হইবে।” আমি মনে মনে অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া উঠিলাম কিন্তু মুখ ফুটিয়া কিছু বলিবার পূর্বেই কিরণ ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আমার মনে হইল, যেন কৈলালে সনাতন ভোলানাথ তাহার কন্যা স্বয়ং লক্ষ্মীকে অতিথির জন্ত এক পেয়ালা চা আনিতে বলিলেন ; অতিথির পক্ষে সে নিশ্চয়ই অমিশ্র অমৃত হইবে, কিন্তু তবু, কাছাকাছি নন্দীভূজী কোনো বেটাই কি হাজির ছিল না । চতুর্থ পরিচ্ছেদ ভবনাথবাবুর বাড়ি আমি এখন নিত্য অতিথি। পূর্বে চা জিনিসটাকে অত্যন্ত ডরাইতাম, এক্ষণে সকালে বিকালে চা খাইয়া খাইয়া আমার চায়ের নেশা ধরিয়া গেল । আমাদের বি. এ. পরীক্ষার জন্ত জর্মানপণ্ডিত-বিরচিত দর্শনশাস্ত্রের নব্য-ইতিহাস আমি সন্ত পাঠ করিয়া আসিয়াছিলাম, তদুপলক্ষে ভৰনাথবাবুর সহিত কেবল দৰ্শনআলোচনার জন্তই আসিতাম কিছুদিন এইপ্রকার ভাল করিলাম। তিনি হ্যামিলটন