পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २8© নীলরতন আশ্বাস দিয়া কছিল, "তোমার নাম কোনো কাগজে প্রকাশ হইবে না।” লাবণ্য অত্যন্ত চিস্তিত বিজ্ঞভাবে কহিল, ‘তবু কাজ কী ! কী জানি যদি কথায় कृतार्क्षींश्च-* নবেন্দু তীব্রম্বরে কহিল, "কাগজে প্রকাশ হইলে আমার নাম ক্ষইয়া যাইবে না।” এই বলিয়া নীলরতনের হাত হইতে খাতা টানিয়া একেবারে হাজার টাকা ফল করিয়া সই করিয়া দিল । মনের মধ্যে আশা রহিল, কাগজে সংবাদ বাহির হইবে না । লাবণ্য মাথায় হাত দিয়া কছিল, “করিলে কী ” নবেন্দু দর্পভরে কহিল, "কেন, অন্যায় কী করিয়াছি।” লাবণ্য কহিল, “শেয়ালদ স্টেশনের গার্ড, হোয়াইটু-অ্যাবের দোকানের অ্যাসিস্টান্ট, হার্ট ব্রাদারদের সহিল-সাহেব, এরা যদি তোমার উপর রাগ করিয়া অভিমান করিয়া বলেন, যদি তোমার পূজার নিমন্ত্রণে তাম্পেন থাইতে না আসেন, যদি দেখা হইলে তোমার পিঠ না চাপড়ান!” নবেন্দু উদ্ধতভাবে কহিল, “তাহা হইলে আমি বাসায় গিয়া মরিয়া থাকিব।” দিনকয়েক পরেই নবেন্দু প্রাতঃকালে চা খাইতে-খাইতে খবরের কাগজ পড়িতেছেন, হঠাৎ চোখে পড়িল এক x স্বাক্ষরিত পত্রপ্রেরক তাহাকে প্রচুর ধন্যবাদ দিয়া কনগ্রেসে চাদার কথা প্রকাশ করিয়াছে এবং তাহার মতো লোককে দলে পাইয়া কনগ্রেসের ষে কতটা বলবৃদ্ধি হইয়াছে লোকটা তাহারও পরিমাণ নির্ণয় করিতে পারে নাই । কনগ্রেসের বলবৃদ্ধি ! হা স্বর্গগত তাত পূর্ণেন্দুশেখর | কনগ্রেসের বলবৃদ্ধি করিবার জন্যই কি তুমি হতভাগাকে ভারতভূমিতে জন্মদান করিয়াছিলে! কিন্তু, দুঃখের সঙ্গে স্বথও আছে । নবেন্দুর মতো লোক যে যে-লে লোক নহেন, তাহাকে নিজ তীরে তুলিবার জন্য যে এক দিকে ভারতবর্ষীয় ইংরাজ-সম্প্রদায় অপর দিকে কনগ্রেস লালান্বিতভাবে ছিপ ফেলিয়া অনিমিষলোচনে বসিয়া আছে, এ কথাটা নিতান্ত ঢাকিয়া রাখিবার কথা নহে। অতএব নবেন্দু হালিতে হাসিতে কাগজখানা লইয়া লাবণ্যকে দেখাইলেন। কে লিখিয়াছে যেন কিছুই জানে না, এমনি ভাবে লাবণ্য আকাশ হইতে পড়িয়া কহিল, "ওমা, এ যে সমস্তই ফাল করিয়া দিয়াছে ! আহা ! আহা ! তোমার এমন শক্র কে ছিল । তাহার কলমে যেন ঘূৰ্ণ ধরে, তাহার কালিতে যেন বালি পড়ে, তাহার কাগজ যেন পোকায় কাটে—*