পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९88 রবীন্দ্র-রচনাবলী নবেন্দু হাসিয়া কছিল, “আর অভিশাপ দিয়ে না। আমি আমার শক্রকে মার্জন করিয়া আশীৰ্বাদ করিতেছি, তাহার লোনার দোয়াত-কলম হয় যেন " দুইদিন পরে কনগ্রেসের বিপক্ষপক্ষীয় একখানা ইংরাজ-সম্পাদিত ইংরাজি কাগজ ডাকযোগে নবেন্দুর হাতে আসিয়া পৌছিলে পড়িয়া দেখিলেন, তাহাতে ‘One who knows’ স্বাক্ষরে পূর্বোক্ত সংবাদের প্রতিবাদ বাহির হইয়াছে। লেখক লিখিতেছেন যে, নবেন্দুকে যাহারা জানেন র্তাহারা তাহার সম্বন্ধে এই দুনাম-রটনা কখনোই বিশ্বাস করিতে পারেন না ; চিতাবাঘের পক্ষে নিজ চর্মের কৃষ্ণ অঙ্কগুলির পরিবর্তন যেমন অসম্ভব নবেন্দুর পক্ষেও কনগ্রেসের দলবৃদ্ধি করা তেমনি । বাবু নবেন্দু শেখরের যথেষ্ট নিজস্ব পদার্থ আছে, তিনি কর্মশূন্য উমেদার ও মস্কেলশূন্ত আইনজীবী নছেন। তিনি দুইদিন বিলাতে ঘুরিয়া, বেশভূষা-আচারব্যবহারে অদ্ভুত কপিবৃত্তি করিয়া, স্পৰ্ধাভরে, ইংরেজ-সমাজে প্রবেশোদ্যত হইয়া, অবশেষে ক্ষুন্নমনে হতাশভাবে ফিরিয়া আসেন নাই, অতএব কেন যে তিনি এই-সকল ইত্যাদি ইত্যাদি । হা পরলোকগত পিতঃ পূর্ণেন্দুশেখর ! ইংরাজের নিকট এত নাম এত বিশ্বাস সঞ্চয় করিয়া তবে তুমি মরিয়াছিলে! এ চিঠিখানিও শু্যালীর নিকট পেখমের মতো বিস্তার করিয়া ধরিবার যোগ্য । ইহার মধ্যে একটা কথা আছে যে, নবেন্দু অখ্যাত অকিঞ্চন লক্ষ্মীছাড়া নহেন, তিনি সারবান পদার্থবান লোক । লাবণ্য পুনশ্চ আকাশ হইতে পড়িয়া কহিল, “এ আবার তোমার কোন পরমবন্ধু লিখিল ! কোন টিকিট কালেক্টর, কোন চামড়ার দালাল, কোন গড়ের বাষ্ঠের বাজনদার /* নীলরতন কহিল, “এ চিঠির একটা প্রতিবাদ করা তো তোমার উচিত।” নবেন্দু কিছু উচু চালে বলিল, “দরকার কী ! যে যা বলে তাহারই কি প্রতিবাদ করিতে হইবে।” r লাবণ্য উচ্চৈঃস্বরে চারি দিকে একেবারে হাসির ফোয়ারা ছড়াইয়া দিল । নবেন্দু অপ্রতিভ হইয়া কহিল, "এত হালি যে ” তাহার উত্তরে লাবণ্য পুনর্বার অনিবাৰ্ধ বেগে হাসিয়া পুষ্পিতধেীবনা দেহুলতা লুষ্ঠিত করিতে লাগিল । নবেন্দু নাকে মুখে চোখে এই প্রচুর পরিহাসের পিচকারি খাইয়া অত্যন্ত নাকাল হইল। একটু ক্ষুণ্ণ হইয়া কহিল, “তুমি মনে করিতেছ, প্রতিবাদ করিতে আমি ভয় করি *