পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९8७ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাহিরের ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বেহার বলিল, “সাহেব অনেকক্ষণ বসিয়া বসিয়া চলিয়া গিয়াছেন।” এই আগাগোড়া মিথ্যাচরণ পাপের কতটা অংশ বেহারার, কতটা অংশ লাবণ্যর, তাহা নৈতিক গণিতশাস্ত্রের একটা স্বল্প সমস্তা । টিকটিকির কাটা লেজ যেমন সম্পূর্ণ অন্ধভাবে ধড় ফউ করে, নবেন্দুর ক্ষুব্ধ হৃদয় ভিতরে ভিতরে তেমনি আছাড় খাইতে লাগিল । সমস্ত দিন খাইতে শুইতে আর সোয়াস্তি রহিল না । o লাবণ্য আভ্যন্তরিক হাস্তের সমস্ত আভাস মুখ হইতে সম্পূর্ণ দূর করিয়া দিয়া উদবিগ্নভাবে থাকিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “আজ তোমার কী হইয়াছে বলে দেখি ! অমুখ করে নাই তো ?” নবেন্দু কায়ক্লেশে হাসিয়া কোনোমতে একটা দেশকালপাত্রোচিত উত্তর বাহির করিল , কহিল, “তোমার এলেকার মধ্যে আবার অস্থখ কিসের। তুমি আমার ধন্বন্তরিনী।” কিন্তু, মুহূর্তমধ্যেই হাসি মিলাইয়া গেল এবং সে ভাবিতে লাগিল, ‘একে আমি কনগ্রেসে চাদ দিলাম, কাগজে কড়া চিঠি লিখিলাম, তাহার উপরে ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অামার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন, আমি তাহাকে বসাইয়া রাখিলাম, না জানি কী মনে করিতেছেন ? ‘হ তাত, হা পূর্ণেন্দুশেখর ! আমি যাহা নই ভাগ্যের বিপাকে গোলেমালে তাহাই প্রতিপন্ন হইলাম ।’ পরদিন সাজগোজ করিয়া ঘড়ির চেন ঝুলাইয়া মস্ত একটা পাগড়ি পরিয়া নবেন্দু বাহির হইল । লাবণ্য জিজ্ঞাসা করিল, “যাও কোথায় ।” নবেন্দু কহিল, *একটা বিশেষ কাজ আছে—* লাবণ্য কিছু বলিল না । সাহেবের দরজার কাছে কার্ড বাছির করিবামাত্র আরদালি কহিল, “এখন দেখা হইবে না।” নবেন্দু পকেট হইতে দুইট টাকা বাহির করিল। আরদালি সংক্ষিপ্ত সেলাম করিয়া কহিল, “আমরা পাচজন আছি।” নবেন্দু তৎক্ষণাৎ দশ টাকার এক নোট বাহির করিয়া দিলেন । সাহেবের নিকট তলৰ পড়িল । সাহেব, তখন চটজুতা ও মর্নিংগেীন পরিয়া লেখাপড়ার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। নবেন্দু একটা সেলাম করিলেন, ম্যাজিস্ট্রেট