পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&8b" . রবীন্দ্র-রচনাবলী নবেন্দু সংকুচিতভাবে পকেট হইতে একটা নোট বাহির করিয়া কহিল, “উহার গরিব মানুষ, কিছু দিতে দোষ কী ” নীলরতন নবেন্দুর হাত হইতে নোট টানিয়া লইয়া কছিল, “উহাদের অপেক্ষ গরিব মানুষ জগতে আছে, আমি তাহাদিগকে দিব ।” কৃষ্ট মহেশ্বরের ভূতপ্রেতগণকেও কিঞ্চিং ঠাণ্ডা করিবার স্বযোগ না পাইয়া নবেন্দু অত্যন্ত ফাপরে পড়িয়া গেল। পেয়াদীগণ যখন বজ্রবৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গমনোন্তত হইল, তখন নবেন্দু একান্ত করুণভাবে তাহাদের দিকে চাহিলেন ; নীরবে নিবেদন করিলেন, “বাবাসকল, আমার কোনো দোষ নাই, তোমরা তো জান ? কলিকাতায় কনগ্রেসের অধিবেশন। তদুপলক্ষে নীলরতন সন্ত্রীক রাজধানীতে উপস্থিত হইলেন। নবেন্দুও তাঁহাদের সঙ্গে ফিরিল। কলিকাতায় পদার্পণ করিবামাত্র কনগ্রেসের দলবল নবেন্দুকে চতুর্দিকে ঘিরিয়া একটা প্রকাণ্ড তাণ্ডব শুরু করিয়া দিল । সম্মান সমাদর স্তুতিবাদের সীমা রহিল না । সকলেই বলিল, “আপনাদের মতো নায়কগণ দেশের কাজে যোগ না দিলে দেশের উপায় নাই।” কথাটার যাথার্থ্য নবেন্দু অস্বীকার করিতে পারিলেন না, এবং গোলেমালে হঠাৎ কখন দেশের একজন অধিনায়ক হইয়া উঠিলেন । কনগ্রেস-সভায় যখন পদার্পণ করিলেন তখন সকলে মিলিয়া উঠিয়া দাড়াইয়া বিজাতীয় বিলাতী তারস্বরে ‘হিপ হিপ হুরে’ শব্দে তাহাকে উৎকট অভিবাদন করিল। আমাদের মাতৃভূমির কর্ণমূল লঙ্গায় রক্তিম হইয়া উঠিল। যথাকালে মহারানীর জন্মদিন আসিল, নবেন্দুর রায়বাহাদুর খেতাব নিকটসমাগত মরীচিকার মতো অন্তধান করিল। সেইদিন সায়াহ্নে লাবণ্যলেখা সমারোহে নবেন্দুকে নিমন্ত্রণপূর্বক তাহাকে নববস্ত্রে ভূষিত করিয়া স্বহস্তে র্তাহার ললাটে রক্তচন্দনের তিলক এবং প্রত্যেক গুগলী তাহার কণ্ঠে একগাছি করিয়া স্বরচিত পুষ্পমালা পরাইয়া দিল । অরুণাম্বরবসন অরুণলেখা সেদিন হাস্তে লজ্জায় এবং অলংকারে আড়াল হইতে ঝকমক্‌ করিতে লাগিল । তাহার স্বেদাঞ্চিত লজ্জাশীতল হন্তে একটা গোড়েমালা দিয়া ভগিনীরা তাহাকে টানাটানি করিল কিন্তু সে কোনোমতে বশ মানিল না এবং সেই প্রধান মাল্যখানি নবেন্দুর কণ্ঠ কামনা করিয়া জনহীন নিশীথের জন্ত গোপনে অপেক্ষা করিতে লাগিল । শুশলীরা নবেন্দুকে কহিল, "আজ আমরা তোমাকে রাজা করিয়া দিলাম! ভারতবর্ষে এমন সম্মান তুমি ছাড়া আর কাহারো সম্ভব হইবে না।”