পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ శిఆ3 একদিন স্বামী আমার শষ্যাপার্থে আসিয়া কহিলেন, “তোমার কাছে আর মিথ্যা বড়াই করিব না, তোমার চোখ-দুটি আমিই নষ্ট করিয়াছি।” দেখিলাম, তাহার কণ্ঠস্বরে অশ্রজল ভরিয়া আসিয়াছে। আমি দুই হাতে র্তাহার দক্ষিণহস্ত চাপিয়া কছিলাম, “বেশ করিয়াছ, তোমার জিনিস তুমি লইয়াছ। ভাবিয়া দেখো দেখি, যদি কোনো ডাক্তারের চিকিৎসায় আমার চোখ নষ্ট হইত তাহাতে অামার কী সাত্বনা থাকিত । ভবিতব্যতা যখন খণ্ডে না তখন চোখ তো অামার কেহই বঁাচাইতে পারিত না, সে চোখ তোমার হাতে গিয়াছে এই আমার অন্ধতার একমাত্র স্থখ। যখন পূজার ফুল কম পড়িয়াছিল তখন রামচন্দ্র তাহার দুই চক্ষু উৎপাটন করিয়া দেবতাকে দিতে গিয়াছিলেন। আমার দেবতাকে আমার দৃষ্টি দিলাম— আমার পূর্ণিমার জ্যোৎস্না, আমার প্রভাতের আলো, আমার আকাশের নীল, আমার পৃথিবীর সবুজ সব তোমাকে দিলাম , তোমার চোখে যখন যাহা ভালো লাগিবে আমাকে মুখে বলিয়ে, সে অামি তোমার চোখের দেখার প্রসাদ বলিয়া গ্রহণ করিব।” আমি এত কথা বলিতে পারি নাই, মুখে এমন করিয়া বলাও যায় না ; এ-সব কথা আমি অনেক দিন ধরিয়া ভাবিয়াছি । মাঝে মাঝে যখন অবসাদ আসিত, নিষ্ঠার তেজ মান হইয়া পড়িত, নিজেকে বঞ্চিত দুঃখিত দুর্ভাগ্যদগ্ধ বলিয়া মনে হইত, তখন আমি নিজের মনকে দিয়া এই-সব কথা বলাইয়া লইতাম ; এই শাস্তি, এই ভক্তিকে অবলম্বন করিয়া নিজের দুঃখের চেয়েও নিজেকে উচ্চ করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিতাম। সে দিন কতকটা কথায় কতকটা নীরবে বোধ করি আমার মনের ভাবটা তাহাকে একরকম করিয়া বুঝাইতে পারিতেছিলাম। তিনি কহিলেন, “কুমু, মূঢ়তা করিয়া তোমার যা নষ্ট করিয়াছি সে আর ফিরাইয়া দিতে পারিব না, কিন্তু আমার যতদূর সাধ্য তোমার চোখের অভাব মোচন করিয়া তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকিব।” আমি কছিলাম, “লে কোনো কাজের কথা নয় । তুমি যে তোমার ঘরকন্নাকে একটি অন্ধের হাসপাতাল করিয়া রাখিবে, সে আমি কিছুতেই দিব না। তোমাকে আর-একটি বিবাহ করিতেই হইবে।” কিজস্ত ষে বিবাহ করা নিতান্ত আবশুক তাহ সৰিস্তারে বলিবার পূর্বে আমার একটুখানি কণ্ঠরোধ হইবার উপক্রম হইল। একটু কাশিয়া, একটু সামলাইয়া লইয়া বলিতে যাইতেছি, এমন সময় আমার স্বামী উজ্জ্বলিত আবেগে বলিয়া উঠলেন, “আমি মূঢ়, আমি অহংকারী, কিন্তু তাই বলিয়া আমি পাষণ্ড নই। নিজের হাতে তোমাকে অন্ধ করিয়াছি, অবশেষে সেই দোষে তোমাকে পরিত্যাগ করিয়া যদি অন্ত Հ313 Փ