পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী পাড়াগায়ে আসিয়া আমার সেই শিবপূজার শীতল শিউলিফুলের গন্ধে হৃদয়ের সমস্ত আশা ও বিশ্বাস আমার সেই শিশুকালের মতোই নবীন ও উজ্জল হইয়া উঠিল। দেবতায় আমার হৃদয় এবং আমার সংসার পরিপূর্ণ হইয়া গেল। আমি নতশিরে লুটাইয়া পড়িলাম। বলিলাম, “হে দেব, আমার চক্ষু গেছে বেশ হইয়াছে, তুমি তো আমার আছে।” হায় ভুল বলিয়াছিলাম। তুমি আমার আছ, এ কথাও স্পর্ধার কথা। আমি তোমার আছি, কেবল এইটুকু বলিবারই অধিকার আছে। ওগো, একদিন কণ্ঠ চাপিয়া আমার দেবতা এই কথাটা আমাকে বলাইয়া লইবে । কিছুই না থাকিতে পারে, কিন্তু আমাকে থাকিতেই হইবে। কাহারো উপরে কোনো জোর নাই ; কেবল নিজের উপরেই আছে । কিছুকাল বেশ স্বখে কাটিল। ডাক্তারিতে আমার স্বামীরও প্রতিপত্তি বাড়িতে লাগিল। হাতে কিছু টাকাও জমিল । 劇 কিন্তু টাকা জিনিসটা ভালো নয়। উহাতে মন চাপ পড়িয়া যায় । মন যখন রাজত্ব করে তখন সে আপনার সুখ আপনি স্বষ্টি করিতে পারে, কিন্তু ধন যখন সুখসঞ্চয়ের ভার নেয় তখন মনের অার কাজ থাকে না । তখন, আগে যেখানে মনের স্বথ ছিল জিনিসপত্র আসবাব আয়োজন সেই জায়গাটুকু জুড়িয়া বলে। তখন স্বখের পরিবর্তে কেবল সামগ্রী পাওয়া যায়। কোনো বিশেষ কথা বা বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করিতে পারি না কিন্তু অন্ধের অনুভবশক্তি বেশি বলিয়া, কিম্বা কী কারণ জানি না, অবস্থার সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামীর পরিবর্তন আমি বেশ বুঝিতে পারিতাম। যৌবনারম্ভে ন্যায়-অন্যায় ধর্ম-অধৰ্ম সম্বন্ধে আমার স্বামীর ষে একটি বেদনাবোধ ছিল সেটা যেন প্রতিদিন অসাড় হইয়া আসিতেছিল । মনে আছে, তিনি একদিন বলিতেন, “ডাক্তারি যে কেবল জীবিকার জন্য শিখিতেছি তাহা নহে, ইহাতে অনেক গরিবের উপকার করিতে পারিব।” যে-সব ডাক্তার দরিদ্র মুমূৰুর দ্বারে আসিয়া আগাম ভিজিট না লইয় নাড়ি দেখিতে চায় না তাহদের কথা বলিতে গিয়া ঘৃণায় তাহার বাক্রোধ হইত। আমি বুঝিতে পারি, এখন আর সে দিন নাই। একমাত্র ছেলের প্রাণরক্ষার জন্য দরিদ্র নারী তাহার পা জড়াইয়া ধরিয়াছে, তিনি তাহ উপেক্ষা করিয়াছেন ; শেষে আমি মাথার দিব্য দিয়া তাহাকে চিকিৎসায় পাঠাইয়াছি, কিন্তু মনের সঙ্গে কাজ করেন নাই । যখন আমাদের টাকা অল্প ছিল তখন অন্যায় উপার্জনকে আমার স্বামী কী চক্ষে দেখিতেন, তাহা আমি জানি । কিন্তু ব্যাঙ্কে এখন অনেক টাকা