পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাচ-চার-পাচের ভাগ— | | | নীরবে গেলে মানমুখে আঁচল টানি কঁাদিছে দুখে মোর বুকে না-বলা বাণী । এই শ্লোককেই তিন-ছয়-পাচ ভাগ করা যায়— | | | নীরবে গেলে মানমুখে আঁচল টানি কাদিছে দুখে মোর বুকে না-বলা বাণী । এর থেকে এই বোঝা যাচ্ছে, প্রদক্ষিণের সমষ্টিমাত্রা চোদ হলেও সেই সমষ্টির অংশের হিসাব কে কী ভাবে নিকাশ করছে তারই উপর ছন্দের প্রভেদ ধরা পড়ে। কেবল ছন্দরসায়নে নয়, বস্তুরসায়নেও এইরকম উপাদানের মাত্রা-ভাগ নিয়েই বস্তুর প্রকৃতিভেদ ঘটে, রাসায়নিকেরা বোধ করি এই কথা বলেন। পয়ার-ছন্দের বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, তাকে প্রায় গাঠে গাঠে ভাগ করা চলে, এবং প্রত্যেক ভাগেই মূল ছন্দের একটা আংশিক রূপ দেখা যায়। যথা— ওহে পান্থ, চলো পথে, পথে বন্ধু আছে একা বলে মানমুখে, সে যে সঙ্গ যাচে। "ওহে পান্থ", এইখানে একটা থামবার স্টেশন মেলে। তার পরে যথাক্রমে, ‘ওহে পান্থ চলো", "ওহে পান্থ চলো পথে’, ‘ওহে পান্থ চলে পথে পথে’। তার পরে ‘বন্ধু আছে, এই ভগ্নাংশটার সঙ্গে পরের লাইন জোড়া যায়, যেমন—"বন্ধু আছে একা’, ‘বন্ধু আছে একা বলে’, ‘বন্ধু আছে একা বলে সে যে’ । কিন্তু তিনের ছন্দকে তার ভাগে ভাগে পাওয়া যায় না, এইজন্তে তিনের ছন্দে ইচ্ছামত থামা চলে না। যেমন, ‘নিশি দিল ডুব অরুণসাগরে’। ‘নিশি দিল’, এখানে থামা যায়, কিন্তু তা হলে তিনের ছন্দ ভেঙে যায় ; ‘নিশি দিল ডুব পর্যন্ত এসে ছয় মাত্রা পুরিয়ে দিয়ে তবেই তিনের ছন্দ হাফ ছাড়তে পারে। কিন্তু আবার, ‘নিশি দিল ডুব অরুণ’ এখানেও থামা যায় না ; কেননা তিন এমন একটি মাত্রা যা আর একটা তিনকে পেলে তবে দাড়াতে পারে, নইলে টলে পড়তে চায় ; এইজন্য ‘অরুণসাগর' এর মাঝখানে থামতে গেলে রসনা কূল পায় না। তিনের ছন্দে গতির প্রাবল্যই বেশি, স্থিতি কম। স্বতরাং তিনের ছন্দ চাঞ্চল্যপ্রকাশের পক্ষে ভালো কিন্তু তাতে গাম্ভীর্ঘ এবং প্রসার অল্প । তিনের মাত্রার ছন্দে অমিত্রাক্ষর রচনা করতে গেলে বিপদে পড়তে হয়, সে যেন চাকা নিয়ে লাঠিখেলার চেষ্টা । পয়ার আtট পায়ে চলে বলে তাকে যে কতরকমে চালানো যায় মেঘনাদবধ কাব্যে তার প্রমাণ