পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী טאנס এখানে এই’ ‘সেই’ ‘কই যায়’ ‘হায় প্রভৃতি শব্দ এক সিলেবল-এর বেশি মান দাবি করলে না । বাঙালি পাঠক সেটাকে অন্যায় না মনে করে সহজ ভাবেই নিলে । কাধে মই, বলে, “কই ভুঁইচাপা গাছ।” দইভাড়ে ছিপ ছাড়ে, খোজে কইমাছ। ঘুটে ছাই মেখে লাউ রাধে ঝাউপাতা, কী খেতাব দেব তায় ঘুরে যায় মাথা। এখানে ‘মই’ ‘কই’ ‘তুই’ ‘দই’ ‘ছাই’ ‘লাউ প্রভৃতি সকলেরই সমান দৈৰ্ঘ্য, যেন গ্র্যানেডিয়ারের সৈন্যদল। যে পাঠক এটা পড়ে দুঃখ পান নি সেই পাঠককেই অনুরোধ করি, তিনি পড়ে দেখুন— দুইজনে জুই তুলতে যখন গেলেম বনের ধারে, সন্ধ্যা-আলোর মেঘের ঝালর ঢাকল অন্ধকারে । কুঞ্জে গোপন গন্ধ বাজায় নিরুদ্দেশের বাশি, দোহার নয়ন খুঁজে বেড়ায় দোহার মুখের হাসি । এখানে যুগ্মধ্বনিগুলো এক সিলেবল-এর চাকার গাড়িতে অনায়ালে ধেয়ে চলেছে। চণ্ডীদাসের গানে রাধিক বলেছেন, “কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গেল।” বাশিধ্বনির এই তো ঠিক পথ, নিয়মের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলে মরমে পৌছত না । কবিরাও সেই কান লক্ষ্য করে চলেন, নিয়ম যদি চৌমাথার পাহারাওয়ালার মতো সিগৃষ্ঠাল তোলে তবু তাদের রুখতে পারে না। আমার দুঃখ এই, তথাচ আইনবিং বলছেন যে, লিপিপদ্ধতির দোষে ‘অক্ষর গুনে ছন্দরচনার অন্ধ অভ্যাস’ আমাদের পেয়ে বসেছে । আমার বক্তব্য এই যে, ছন্দরচনার অভ্যাসটাই অন্ধ অভ্যাস। অন্ধের কান খুব সজাগ, ধ্বনির সংকেতে সে চলতে পারে, কবিরও সেই দশা । তা যদি না হত তা হলেই পায়ে পায়ে কবিকে চোখে চশমা এটে অক্ষর গ'নে গ'নে চলতে হত । ‘বৎসর’ ‘উৎসব’ প্রভৃতি খণ্ড ৎ-ওয়ালা কথাগুলোকে আমরা ছন্দের মাপে বাড়াই কমাই, এরকম চাতুরী সম্ভব হয় যেহেতু খণ্ড ৎ-কে কখনো আমরা চোখে দেখার সাক্ষ্যে এক অক্ষর ধরি, আবার কখনো কানে শোনার দোহাই দিয়ে তাকে আধ অক্ষর বলে