পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्ब्ञ |లనe রীতি ও ঘরের রীতিতে কিছু ভেদ থাকেই। শকুন্তলার বাকল দেখে ছয়ম্ভ বলেছিলেন : কিমিব হি মধুরাণাং মণ্ডলং নাকৃতীনাম। কিন্তু যখন তাকে রাজাস্তঃপুরে নিয়েছিলেন তখন তাকে নিশ্চয়ই বাকল পরান নি। তখন শকুন্তলার স্বাভাবিক শোভাকে অলংকৃত করেছিলেন, সৌন্দর্ধবৃদ্ধির জন্যে নয়, মর্যাদারক্ষার জন্যে । রাজরানীর সৌন্দর্ধ ব্যক্তিবিশেষে বিচিত্র, কিন্তু তার মর্যাদার আদর্শ সকল রাজরানীর মধ্যে এক । ওটা প্রকৃতির হাতে তৈরি নয়, রাজসমাজের দ্বারা নির্দিষ্ট । অর্থাৎ, ওটা প্রাকৃত নয়, সংস্কৃত । তাই দুন্যস্ত স্বীকার করেছিলেন বটে বনলতার দ্বারা উদ্যানলতা পরাভূত, তবু উষ্ঠানকে বনের আদর্শে রমণীয় করে তুলতে নিশ্চয় তার সাহস হয় নি। তাই, আমি নিজে আকনফুল ভালোবালি, কিন্তু আমার সাধুসমাজের মালি ওই গাছের অঙ্কুর দেখবামাত্র উপড়ে ফেলে। সে যদি কবি হত, সাধুভাষায় ছাড়া কবিতা লিখত না । সাধুভাষার ছন্দের বাধারীতি যে-জাতীয় ছন্দে চলে এবং শোভা পায় সে হচ্ছে পয়ারজাতীয় ছন্দ । এখানে ফাক-ফণক নির্দিষ্ট আসনের উপর নানা ওজনেরই ধ্বনিকে চড়ানো নিরাপদ। এখানে ঠিক চোদটা অক্ষরকে বাহন করে যুগ্ম-অযুগ্ম নানারকমের ধ্বনিই একত্র সভা জমাতে পারে । কাব্যলীলা একদিন যখন শুরু করেছিলেম তখন বাংলাসাহিত্যে সাধুভাষারই ছিল একাধিপত্য। অর্থাৎ, তখন ছিল কাটা-কাটা পিড়িতে ভাগ-করা ছন্দ । এই আইনের অধীনে যতক্ষণ পয়ারের এলাকায় থাকি ততক্ষণ আসনপীড়া ঘটে না । কিন্তু, তিনমাত্রামুলক ছন্দের দিকে আমার কলমের একটা স্বাভাবিক ক্টোক ছিল। ওই ছন্দে প্রত্যেক অক্ষরে স্বতন্ত্ৰ-আরূঢ় সকল ওজনের ধ্বনিকেই সমান দরের একক বলে ধরে নিতে বারম্বার কানে বাজত। সেইজন্যে যুক্ত-অক্ষর অর্থাৎ যুগ্মধ্বনি বর্জন করবার একটা দুর্বল অভ্যাস আমাকে ক্রমেই পেয়ে বসছিল। ঠোকর খাবার ভয়ে পদগুলোকে একেবারে সমতল করে যাচ্ছিলুম। সব জায়গায় পেরে উঠি নি, কিন্তু মোটের উপর চেষ্টা ছিল । ‘ছবি ও গান’-এ রাহুর প্রেম’ কবিতা পড়লে দেখা যাবে যুক্ত-অক্ষর বেটিয়ে দেবার প্রয়াস আছে তবু তারা পাথরের টুকরোর মতো রাস্তার মাঝে মাঝে উচু হয়ে রইল। তাই যখন লিখেছিলুম— কঠিন বাধনে চরণ বেড়িয়া চিরকাল তোরে রব অঁাকড়িয়া লৌহখৃস্থলের ডোর— মনে খটকা লেগেছিল, কান প্রসন্ন হয় নি। কিন্তু, তখন কলম ছিল অপটু এবং অলস মন ছিল অসতর্ক । কেননা, পাঠকদের তরফ থেকে বিপদের আশঙ্কা ছিল না । তখন