পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩e রবীন্দ্র-রচনাবলী নিয়ে তার গৌরব । বস্তুত, এই অবকাশের সুযোগ গ্রহণ করে তার ধ্বনিসমারোহ বাড়িয়ে তুললে এ ছন্দের সার্থকতা। যথা— চৈতন্য নিমগ্ন হল রূপসিন্ধুতলে । প্রাকৃত-বাংলা দেখা যাক । রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপ রতন আশা ক’রে এখানে ‘রূপ’ আপন হসন্ত ‘প’এর বেণকে ‘সাগরে’র ‘সা’টাকে টেনে আপন করে নিয়েছে, মাঝে ব্যবধান থাকতে দেয় নি। ‘রূপ-সা’ তাই আপনিই তিন মাত্রা হয়ে গেল। ‘সাগরের বাকি টুকরো রইল গরে’। সে আপন ওজন বঁাচাবার জন্যে ‘রোটাকে দিলে লম্ব করে, তিন মাত্র পুরল। ডুব আপনার হলস্তর টানে দিয়েছি’র ‘দি’টাকে করলে আত্মসাৎ ৷ এমনি করে আগাগোড়া তিন মাত্রা জমে উঠল । হসন্তপ্রধান ভাষা সহজেই তিন মাত্রার দানা পাকায়, এটা দেখেছি। এমন-কি, যেখানে হসস্তের ভিড় নেই সেখানেও তার ওই একই চাল । এটা যেন তার অভ্যস্ত হয়ে মজ্জাগত হয়ে গেছে । যেমন— অচে- তনে- [ ছিলেম । ভালো- ৷ আমায় চেতন ৷ করলি | কেনে- । প্রাকৃত-বাংলার এই তিন মাত্রার ভঙ্গি চণ্ডীদাস জ্ঞানদাস প্রভৃতি বৈষ্ণব কবির সাধুভাষাতেও গ্রহণ করেছেন। যেমন— হাসিয়া হাসিয়া মুখ নিরখিয়া মধুর কথাটি কয়। ছায়ার সহিতে ছায়া মিশাইতে পথের নিকটে রয় । কিন্তু প্রাকৃত-বাংলার ক্রিয়াপদ নিয়ে একটু ভাববার বিষয় আছে। মত্তরোবে বীরভদ্র ছুটুল উর্ধ্বশ্বাসে, ঘূর্ণিবেগে উড়ল ধুলো রক্ত সন্ধ্যাকাশে। কিম্বা— ছুটুল কেন মহেন্দ্রের আনন্দের ঘোর, টুটুল কেন উর্বশীর মঙ্গীরের ডোর । বৈকালে বৈশাখী এল আকাশলুণ্ঠনে, শুক্লরাতি ঢাকুল মুখ মেঘাবগুণ্ঠনে। এদের সম্বন্ধে কী বলা যাবে।