পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী অপর পক্ষে— রাস্ত দিয়ে কুস্তিগির চলে ঘেঁষাৰ্ঘেষি, একটা নয় দুটো নয় একশোর বেশি। প্রয়োজনমত এটাও চলে, ওটাও চলে । নিখতির মাপে বিচার করতে গেলে বিশুদ্ধ ওজনের পয়ার হচ্ছে— পালোয়ানে পালোয়ানে চলে ঘেষাৰ্ঘেষি । তাতে প্রত্যেক অক্ষর নিখুঁত এক মাত্রা, সবস্থদ্ধ চোট । রাস্তা’ কুস্তি প্রভৃতি শব্দে ওজন বেড়ে যায়, তবুও বহুসহিষ্ণু পয়ারকে কাবু করতে পারে না । প্রাকৃত-বাংলার ক্রিয়াপদ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ক্রিয়াপদেই তার আপন চেহারা । ওইটুকু ছাড়া তার আর কোনো উপসর্গ নেই বললেই চলে। বাংলা-সংস্কৃত ভাষার মতো সে শুচিবায়ুগ্রস্ত নয়। ভোজে বলে গেছে ব্রাহ্মণ, তাকে পরিবেশনকর্তা জিজ্ঞাসা করলে, নিরামিষ না আমিষ । সে বললে, দ্বেী কর্তব্যে । তেমনি শব্দ-বাছাই নিয়ে যদি প্রাকৃত-বাংলাকে প্রশ্ন করা যায় ‘কী চাই, প্রাকৃত শব্দ না সংস্কৃত শব্দ সে বলবে, দ্বেী কর্তব্যে। তার জাতবিচার নেই বললেই হয় । পছন্দ হবামাত্র ইংরেজি পারসি সব শব্দই সে আত্মসাৎ করে। আবার অমরকোষবিহারী বড়ো বড়ো বহরওয়ালা সংস্কৃত শব্দকে ওদেরই ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে নেয়। সংস্কৃত ভাষার প্রতি সন্ত্রমবশত তার মুখে বাধবে না— রূপযৌবন উপঢৌকন দেবেন কন্যা তাহারে, তাই পরেছেন চীনাংশুকের পট্টবসন বাহারে। নন-কো-অপরেশনের দিনেও ইংরেজি শব্দ চালিয়ে দিতে পিকেটিঙের ভয় নেই। যথা— আইডিয়াল নিয়ে থাকে, নাহি চড়ে হাড়ি, প্রাকটিক্যাল লোকে বলে, এ যে বাড়াবাড়ি। শিবনেত্র হল বুঝি, এইবার মোলো, অকসিজেন নাকে দিয়ে চাঙ্গা করে তোলো । কিন্তু সংস্কৃত-বাংলায় বাছবিচার খুব কড়া। আধুনিকদের হাতে পড়ে মেচ্ছপনা কিছুকিছু সয়ে গেছে ; কিন্তু সেটুকু বড়োজোর বাইরের রোয়াকে, ভিতরমহলে রতিরক্ষণ সম্বন্ধে কষাকষি । এটাকে প্রহসন বলে পাঠক হয়তো মাপ করতে পারেন, কিন্তু প্রাকৃত-বাংলায় এইরকম