পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O8 o রবীন্দ্র-রচনাবলী মাত্রারই প্রাধান্ত । এর ধড়ট ছয় মাত্রার, ল্যাজটা তিন মাত্রার। চোখ দিয়ে এক পঙক্তিতে নয় মাত্রা দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু অমূল্যবাবুর মতে, কান দিয়ে দেখলে ওর দুটো অসমান ভাগ বেরিয়ে পড়ে । এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমার অঙ্কবিদ্যায় আমি যে সংখ্যাকে ৯ বলি অমূল্যবাবুর অঙ্কশাস্ত্রেও তাকেই ৯ বলে বটে, কিন্তু ছন্দের মাত্রানির্ণয় সম্বন্ধে তার পদ্ধতির সঙ্গে আমার পদ্ধতির মূলেই প্রভেদ আছে। কথাটা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো । পৃথিবী চলছে, তার একটা ছন্দ আছে। অর্থাৎ, তার গতিকে মাত্রাসংখ্যায় ভাগ করা যায়। এই ছন্দের পূর্ণায়তনকে নির্ণয় করব কোন লক্ষণ মতে । পৃথিবী নিয়মিত কালে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আমাদের পঞ্জিকা-অনুসারে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করে চৈত্রসংক্রাস্তিতে তার আবর্তনের এক পর্যায় শেষ হয়, তার পরে আবার সেই পরিমিতকালে পয়লা বৈশাখ থেকে পুনর্বার তার আবর্তন শুরু হয়। এই পুনরাবর্তনের দিকে লক্ষ করে আমরা বলতে পারি, পৃথিবীর স্বৰ্ষপ্রদক্ষিণের মাত্রাসংখ্যা ৩৬৫ দিন । । মহাভারতের কথা অমুতসমান, மு কাশীরামদাস কহে শুনে পুণ্যবান । এই ছন্দের যাত্রাপথে পুনরাবর্তন আরম্ভ হয়েছে কোথায় সে তো জানা কথা । সেই অনুসারে সর্বজনে বলে থাকে, এর মাত্রাসংখ্যা চোদ । বলা বাহুল্য, এই চোদ মাত্রা একটা অখণ্ড নিরেট পদার্থ নয় । এর মধ্যে জোড় দেখা যায়, সেই জোড় আট মাত্রার অবসানে, অর্থাৎ ‘মহাভারতের কথা একটুখানি দাড়িয়েছে যেখানে এসে । পয়ারে এই দাড়াবার আডডা দু জায়গায়, প্রথম আট ধ্বনিমাত্রার পরে ও শেষাধের ছয় ধ্বনিমাত্রার ও দুই যতিমাত্রার শেষে । পৃথিবীর প্রদক্ষিণ-ছন্দের মধ্যেও দুইভাগ আছে, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন । যতি-সমেত বোলো মাত্রা পয়ারেও তেমনি আছে উত্তরভাগ ও দক্ষিণভাগ, কিন্তু সেই দুটি ভাগ সমগ্রেরই অন্তর্গত । মহাভারতের বাণী অমৃতসমান মানি, কাশীরামদাস ভলে e শোনে তাহ সর্বজনে । যদিও পয়ারের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ তবু একে অন্ত ছন্দ বলব, কারণ এর পুনরাবর্তন আট মাত্রায়, ষোলো মাত্রায় নয় । আঁধার রজনীপোহালো, জগৎ পুরিল পুলকে।