পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्ब्ल LNS বর্ষণশাস্ত পাণ্ডুর মেঘ যবে ক্লাস্ত বন ছাড়ি মনে এল নীপরেণুগন্ধ, ভরি দিল কবিতার ছন্দ । এখানে চারিটি পদ এবং প্রত্যেক পদ নানা অসমান মাত্রায় রচিত, সমস্তটাকে নিয়ে ছন্দের রূপকল্প । বিশেষজাতীয় ছন্দে এইরূপ পদ ও মাত্রা গণনাতেও আমি পিঙ্গলাচার্যের অনুবতী । জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১ বাংলা ছন্দের প্রকৃতি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠত আমাদের দেহ বহন করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভার, আর তাকে চালন করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গতিবেগ ; এই দুই বিপরীত পদার্থ যখন পরম্পরমিলনে লীলায়িত হয় তখন জাগে নাচ । দেহের ভারটাকে দেহের গতি নানা ভঙ্গিতে বিচিত্র করে, জীবিকার প্রয়োজনে নয়, স্বষ্টির অভিপ্রায়ে ; দেহটাকে দেয় চলমান শিল্পরূপ ৷ তাকে বলি নৃত্য । রূপস্থইর প্রবাহই তো বিশ্ব । সেই রূপটা জাগে ছন্দে, আধুনিক পরমাণুতত্বে সে কথা স্বম্পষ্ট । সাধারণ বিদ্যুৎপ্রবাহ আলো দেয়, তাপ দেয়, তার থেকে রূপ দেখা দেয় না। কিন্তু, বিদ্যুৎকণা যখন বিশেষ সংখ্যায় ও গতিতে আমাদের চৈতন্তের দ্বারে ঘা মারে তখনই আমাদের কাছে প্রকাশ পায় রূপ, কোনোটা দেখা দেয় লোনা হয়ে, কোনোটা হয় সীলে । বিশেষসংখ্যক মাত্রা ও বিশেষবেগের গতি এই দুই নিয়েই ছন্দ, সেই ছন্দের মায়ামন্ত্র না পেলে রূপ থাকে অব্যক্ত । বিশ্বস্বষ্টির এই ছন্দোরহস্ত মামুষের শিল্পস্থষ্টিতে। তাই ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলছেন : শিল্পানি শংসস্তি দেবশিল্পানি । মাহুষের সব শিল্পই দেবশিল্পের স্তবগান করছে। এতেষাং বৈ শিল্পানামন্থকৃতীহ শিল্পম্ অধিগম্যতে। মানবলোকের সব শিল্পই এই দেবশিল্পের অমুকুতি, অর্থাৎ বিশ্বশিল্পের রহস্তকেই অনুসরণ করে মানবশিল্প। সেই মূলরহস্ত ছন্দে, সেই রহস্ত আলোকতরঙ্গে, শবতরঙ্গে, রক্ততরঙ্গে, স্বায়ুতন্তুর বৈদ্যুততরঙ্গে । 바 মানুষ তার প্রথম ছন্দের স্বষ্টিকে জাগিয়েছে আপন দেহে । কেননা তার দেহ ছন্দরচনার উপযোগী। ভূতলের টান থেকে মুক্ত করে দেহকে সে তুলেছে উর্ধ্ব দিকে।