পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"Qぐり রবীন্দ্র-রচনাবলী বিদ্যুৎ-লাঙ্গুল করি ঘন তর্জন বজ্রবিদ্ধ মেঘ করে বারি বর্জন । তদ্রুপ যাতনায় অস্থির শাদুল অস্থিবিদ্ধগলে করে ঘোর গর্জন । কাব্যসাহিত্য কেবল রসসাহিত্য নয়, তা রূপসাহিত্য । সাধারণত, ভাষায় শব্দগুলি অর্থবহন করে, কিন্তু ছন্দে তারা রূপগ্রহণ করে । ছন্দ সম্বন্ধে এই গেল আমার সাধারণ বক্তব্য । বিশ্বের ভাষায় মানুষের ভাষায় রূপ দেওয়া তার কাজ। এখন বাংলা কাব্যছন্দ সম্বন্ধে বিশেষভাবে কিছু বলবার চেষ্টা করা যাক । २ প্রত্যেক ভাষার একটি স্বকীয় ধ্বনি-উদ্ভাবনা আছে । তার থেকে তার স্বরূপ চেনা যায় । ইংরেজিতে বেশির ভাগ শব্দে স্বরবর্ণের মধ্যস্থত নেই বলে সে যেন হয়েছে সরদ যন্ত্রের মতো, আঙুলের আঘাতে তার ঐকমাত্রিক ধ্বনিগুলি উচ্চকিত, ইটালিয়ানে ছড়ির লম্বা টানে বেহালার টানা স্বর। বাংলাভাষাও নিজের একটা বিশেষ ধ্বনিস্বরূপ আছে। তার ধ্বনির এই চেহারা হসস্তবর্ণের যোগে । যে বাংলা আমাদের মায়ের কণ্ঠগত, জ্যেষ্ঠতাতের লেখনীগত নয়, ইংরেজির মতো তারও স্বর ব্যঞ্জনবর্ণের সংঘাতে। আজ সাধুভাষার ছন্দে জোর দেবার অভিপ্রায়ে অভিধান ঘেটে যুক্তবর্ণের আয়োজনে লেগেছি, অথচ প্রাকৃতবাংলায় হসন্তের প্রাধান্ত আছে বলেই যুক্তবর্ণের জোর তার মধ্যে আপনি এসে পড়ে। এই ভাষায় একটি শ্লোক রচনা করা যাক একটিও যুক্তবর্ণনা দিয়ে । দূর সাগরের পারের পবন g আসবে যখন কাছের কুলে রঙিন আগুন জ্বালবে ফাগুন, মাতবে অশোক সোনার ফুলে । হসন্তের ধাক্কায় যুক্তবর্ণের ঢেউ আপনি উঠছে। চীনদেশের সাংঘাই নগরে একটি আরামবাগ আছে । অনেককাল সেখানে চীনের লোকেরই প্রবেশ নিষেধ ছিল । তেমনি বাংলাদেশের সাহিত্য-আরামবাগ থেকে বাংলাভাষার স্বকীয় ধ্বনিরূপটি পণ্ডিত-পাহারাওয়ালার ধাক্কা খেয়ে অনেক কাল বাইরে বাইরে ফিরেছিল ।