পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्न्न \లు তনোতু ক্ষেমং নস্তব বদনসৌন্দর্যলহরীপরীবাহস্ৰোতঃসরণিরিব সীমন্তসরণিঃ ॥ ওই সিথির রেখা আমাদের কল্যাণ দিক যে-রেখাটি তোমার মুখসৌন্দর্যধারার স্রোতঃপথের মতো । আর যে-সিদ্ধর আঁকা রয়েছে তোমার ওই সিথিতে সে যেন নবীন সূর্যের আলো, তাকে ঘনকবরীভারের অন্ধকার শত্রু হয়ে বন্দী করে রেখেছে । আনন্দলহরীতে ষে নারীরূপের কথা পাই সে সাধারণ নারী নয়, সে বিশ্বসৌন্দর্যের প্রতিমা । নিয়ত বয়ে চলেছে তার সৌন্দর্যের প্রবাহ, পিছনে তার ঘনকবরীপুঞ্জে রাত্রি, সম্মুখে তার সীমস্তরেখার সিন্দুররাগে তরুণস্বর্বকিরণ, এই অল্প কথায় ভাবের যে স্তবকগুলি সংবদ্ধ তাতে কবিহদয়ের আনন্দ দিয়ে আঁকা একটি ছবি দেখতে পাচ্ছি, সেই ছবিটি বিশ্বপ্রকৃতির নারীরূপ। যে ছন্দ দিয়ে এই ছবি আঁকা এ শুধু ভাষার ছন্দ নয়, এ ভাবের ছন্দ। এতে ভাবের গুটিকয়েক উপকরণ উপমার গুচ্ছে সাজানো, তাই দিয়েই ওর জাদু । ওর নিত্যসচল কটাক্ষে অনেক না-বলা কথার ইশারা রয়ে গেল। একদিন ছিল যখন ছাপার অক্ষরের সাম্রাজ্যপত্তন হয় নি । যেমন কল-কারখানার আবির্ভাবে পণ্যবস্তুর ভূরি-উৎপাদন সম্ভবপর হল তেমনি লিখিত ও মুঞ্জিত অক্ষরের প্রসাদে সাহিত্যে শব্দসংকোচের প্রয়োজন চলে গেছে । আজ সরস্বতীর আসনই বল, আর তার ভাণ্ডারই বল প্রকাও আয়তনের । সাবেক সাহিত্যের দুই বাহন, তার উচ্চৈঃশ্রব। আর তার ঐরাবত, তার শ্রুতি ও স্মৃতি , তারা নিয়েছে ছুটি । তাদের জায়গায় যে যান এখন চলল, তার নাম দেওয়া যেতে পারে লিখিতি । সে রেলগাড়ির মতে, তাতে কোনোট যাত্রীর কামরা, কোনোটা মালের। কোনোটাতে বস্তুর পিণ্ড, সংবাদপুঞ্জ, কোনোটাতে সজীব যাত্রী অর্থাৎ রসসাহিত্য। তার অনেক চাকা, অনেক কক্ষ ; একসঙ্গে মস্ত মন্ত চালান। স্থানের এই অসংকোচে গদ্যের ভূরিভোজ । সাহিত্যে অক্ষরের অতিথিশালায় বাক্যের এত বড়ো সদাত্ৰতের আয়োজন যখন ছিল না তখন ছন্দের সাহায্য ছিল অপরিহার্য । তাতে বাধা পেত শব্দের অতিবায়িতা, আর ছন্দ আপন সাংগীতিক গতিবেগের দ্বারা স্মৃতিকে রাখত সচল করে। সেদিন পদ্যছন্দের সতিন ছিল না ভাষায়, সেদিন বাণীর ছন্দের সঙ্গে ভাবের ছন্দের অৰয়-বিবাহ অর্থাৎ মনোগেমি ছিল প্রচলিত। এখন বই-পড়াটা অনেকস্থলেই নিঃশব্দ পড়া, কানের একান্ত শাসন তাই উপেক্ষিত হতে পারে। এই স্কযোগেই আজকাল কাব্যশ্রেণীর রচনা অনেক স্থলে পদ্যছন্দের বিশেষ অধিকার এড়িয়ে ভাবচ্ছন্দের মুক্তি দাবি করছে।