পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ፃ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বপ্ন দেখলেম, যেন চড়েছি কোনো উচু ভাঙায় ; সেখানে চোখে পড়ল গভীর এক ইদারা । চলতে চলতে কণ্ঠ আমার শুকিয়েছে ; ইচ্ছে হল, জল খাই । ব্যগ্র দৃষ্ট নামতে চায় ঠাণ্ড সেই কুয়োর তলার দিকে । ঘুরলেম চার দিকে, দেখলেম ভিতরে তাকিয়ে, জলে পড়ল আমার ছায়া । দেখি এক মাটির ঘড়া কালো সেই গহবরে ; দড়ি নাই যে তাকে টেনে তুলি । ঘড়াটা পাছে তলিয়ে যায় এই ভেবে প্রাণ কেন এমন ব্যাকুল হল । পাগলের মতো ছুটলেম সহায় খুঁজতে। গ্রামে গ্রামে ঘুরি, লোক নেই একজনও, কুকুরগুলো ছুটে আসে টুটি কামড়ে ধরতে । কাদতে কঁদিতে ফিরে এলেম কুয়োর ধারে । জল পড়ে দুই চোখ বেয়ে, দৃষ্টি হল অন্ধপ্রায় । শেষকালে জগিলেম নিজেরই কাল্লার শব্দে । ঘর নিস্তব্ধ, স্তব্ধ সব বাড়ির লোক ; বাতির শিখা নিবো-নিবো, তার থেকে সবুজ ধোয় উঠছে, তার আলো পড়ছে আমার চোখের জলে । ঘণ্টা বাজল, রাতদুপুরের ঘণ্টা, বিছানায় উঠে বসলুম, ভাবতে লাগলুম অনেক কথা । মনে পড়ল, যে ভাঙাট দেখেছি সে চাং-আনের কবরস্থান ; তিনশো বিঘে পোড়ো জমি, ভারী মাটি তার, ਚੌਲ੍ਹੇ সব ঢিবি : নীচে গভীর গর্তে মৃতদেহ শোওয়ানো । শুনেছি, মুত মানুষ কখনো-কখনো দেখা দেয় সমাধির বাইরে । আজ আমার প্রিয় এসেছিল ইদারায় ডুবে-যাওয়া সেই ঘড়া, তাই দুচোখ বেয়ে জল পড়ে আমার কাপড় গেল ভিজে ।