পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ође о রবীন্দ্র-রচনাবলী আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিয়, হায়, তাই ভাবি মনে । জীবনপ্রবাহ বহি কালসিন্ধু-পানে ধায়, ফিরাব কেমনে ? একটি ছত্রের মধ্যে দুইটি ছত্র পুরিয়া দিলে পর প্রথমত চোখে দেখিতে খারাপ হয়, দ্বিতীয়ত কোনখানে ইপি ছাড়িতে হইবে পাঠকরা হঠাৎ ঠাহর পান না। এখানে-ওখানে হাতড়াইতে হাতড়াইতে অবশেষে ঠিক জায়গাটা বাহির করিতে হয় । প্রকাশক ষে বলিয়াছেন, বাংলা ছন্দের প্রাণগত ভাব কী ও তাহার স্বাভাবিক গতি কোন দিকে তাহা সিন্ধুদূতের ছন্দ আলোচনা করিলে উপলব্ধ হইতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের মতভেদ আছে। ভাষার উচ্চারণ-অনুসারে ছন্দ নিয়মিত হইলে তাহাকেই স্বাভাবিক ছন্দ বলা যায়, কিন্তু বর্তমান কোনো কাব্যগ্রন্থে (এবং সিন্ধুদূতেও ) তদনুসারে ছন্দ নিয়মিত হয় নাই। আমাদের ভাষায় পদে পদে হসন্ত শব্দ দেখা যায়, কিন্তু আমরা ছন্দ পাঠ করিবার সময় তাহদের হসন্ত উচ্চারণ লোপ করিয়া দিই। এইজন্য যেখানে চৌদ্দটা অক্ষর বিন্যস্ত হইয়াছে, বাস্তবিক বাংলার উচ্চারণ অনুসারে পড়িতে গেলে তাহা হয়তো আট বা নয় অক্ষরে পরিণত হয় । রামপ্রসাদের নিম্নলিখিত ছন্দটি পাঠ করিয়া দেখো । মন বেচারির কী দোষ আছে, তারে যেমন নাচাও, তেমনি নাচে । দ্বিতীয় ছত্রের ‘তারে নামক অতিরিক্ত শব্দটি ছাড়িয়া দিলে দুই ছত্রে এগারোটি করিয়া অক্ষর থাকে। কিন্তু, উহাই আধুনিক ছন্দে পরিণত করিতে হইলে নিম্নলিখিতরূপ হয়— মলের কী দোষ আছে, যেমন নাচাও নাচে। ইহাতে দুই ছত্রে আটটি অক্ষর হয় । তাল ঠিক সমান রহিয়াছে অথচ অক্ষর কম পড়িতেছে। তাহার কারণ, শেষোক্ত ছন্দে আমরা হসন্ত শব্দকে আমল দিই না । বাস্তবিক ধরিতে গেলে রামপ্রসাদের ছন্দেও আটটির অধিক অক্ষর নাই । মস্বেচারি কী দোষাছে, যেমন্নাচ তেন্নি নাচে । দ্বিতীয় ছত্র হইতে নাচাও’ শব্দের 'ও' অক্ষর ছাড়িয়া দিয়াছি ; তাহার কারণ এই ও-টি হসন্ত ও পরবর্তী তে’-র সহিত ইহা যুক্ত। o