পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\S)×ა\ყ রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু, স্বর হইতে বিযুক্ত করিয়া পড়িতে গেলে এই ছন্দগুলি একেবারে বিধবার মতো হইয়া পড়ে। এইজন্য আজ পর্যন্ত বাংলা কবিতা পড়িতে হইলে আমরা স্বর করিয়া পড়ি। এমন-কি, আমাদের গদ্য আবৃত্তিতেও যথেষ্ট পরিমাণে স্বর লাগে। আমাদের ভাষার প্রকৃতি-অনুসারেই এরূপ ঘটিয়াছে। আমাদের এই অভ্যাসবশত ইংরেজি পড়িবার সময়েও আমরা স্থর লাগাই , ইংরেজের কানে নিশ্চয়ই তাহা অদ্ভূত লাগে । * কিন্তু, আমাদের প্রত্যেক অক্ষরটিই যে বস্তুত এক মাত্রার এ কথা সত্য নহে। যুক্ত বর্ণ এবং অযুক্ত বর্ণ কখনোই এক মাত্রার হইতে পারে না । কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান। পুণ্যবান শব্দটি ‘কাশীরাম’ শব্দের সমান ওজনের নহে। কিন্তু, আমরা প্রত্যেক বর্ণটিকে স্বর করিয়া টানিয়া টানিয়া পড়ি বলিয়া আমাদের শব্দগুলির মধ্যে এতটা ফণক থাকে যে, হালকা ও ভারী দুইরকম শব্দই সমমাত্রা অধিকার করিতে পারে।. Equality, Fraternity, প্রভৃতি পদার্থগুলি খুব মূল্যবান বটে, কিন্তু সেইজন্যই ঝুটা হইলে তাহা ত্যাজ্য হয় । আমাদের সাধুছন্দে বর্ণগুলির মধ্যে সাম্য ও সৌভ্রাত্র দেখা যায় তাহা গানের স্বরে সাচ্চা হইতে পারে, কিন্তু আবৃত্তি করিয়া পড়িবার প্রয়োজনে তাহা ঝুট । এই কথাটা অনেকদিন আঞ্জার মনে বাজিয়াছে। কোনো কোনো কবি ছন্দের এই দীনতা দূর করিবার জন্য বিশেষ জোর দিবার বেলায় বাংলা শব্দগুলিকে সংস্কৃতের রীতি-অনুযায়ী স্বরের হ্রস্ব দীর্ঘ রাখিয়া ছন্দে বসাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। ভারতচন্দ্রে তাহার দুই-একটা নমুনা আছে। যথা— মহারুদ্র বেশে মহাদেব সাজে । বৈষ্ণব কবিদের রচনায় এরূপ অনেক দেখা যায় . কিন্তু, এগুলি বাংলা নয় বলিলেই হয়। ভারতচন্দ্র যেখানে সংস্কৃত ছন্দে লিখিয়াছেন, সেখানে তিনি বাংলা শব্দ যতদূর সম্ভব পরিত্যাগ করিয়াছেন এবং বৈষ্ণব কবিরা যে ভাষা ব্যবহার করিয়াছেন তাহ মৈথিলী ভাষার বিকার । আমার বড়দাদ মাঝে মাঝে এ কাজ করিয়াছেন, কিন্তু তাহ কৌতুক করিয়া । सूर्थ ইচ্ছা সম্যক্ ভ্রমণগমনে কিন্তু পাথেয় নাস্তি । পায়ে শিল্পী মন উজু উড় এ কি দৈবেরি শাস্তি! বাংলায় এ জিনিল চলিবে না ; কারণ বাংলায় হ্রস্বদীর্ঘশ্বরের পরিমাণভেদ স্থব্যক্ত নহে। কিন্তু, যুক্ত ও অযুক্ত বর্ণের মাত্রাভেদ বাংলাতেও না ঘটিয়া থাকিতে পারে না।...