পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8o3 রবীন্দ্র-রচনাবলী জন্তুর পা বল, পাখির পাখী বল, মাছের পাখনা বল, দুইয়ের যোগে তবে চলে । সেই দুইয়ের নিয়মিত গতির উপরে যদি একটা একের অতিরিক্ত ভার চাপানো যায় তবে সেই গতিতে একটা অনিয়মের বেগ পড়ে, সেই অনিয়মের ঠেলায় নিয়মিত গতির বেগ বাড়িয়া ষায় এবং তাহার বৈচিত্র্য ঘটে। মানুষের শরীর তাহার দৃষ্টাস্ত । চারপেয়ে মানুষ যখন সোজা হইয়া দাড়াইল তখন তাহার কোমর হইতে মাথা পর্যন্ত টলমলে এবং কোমর হইতে পদতল পর্যন্ত মজবুত হওয়াতে এই দুইভাগের মধ্যে অসামঞ্জস্ত ঘটিয়াছে। এই অসামঞ্জস্তকে ছন্দে সামলাইবার জন্য মানুষের গতিতে মাথা হাত কোমর পা বিচিত্র হিল্লোলে হিল্লোলিত হইতেছে । চার পায়ের ছন্দ ইহার চেয়ে অনেক সরল । । অতএব বাংলা ছন্দকে সম মাত্রা, অসম মাত্রা এবং বিষম মাত্রায় শ্রেণীবদ্ধ করা যাইতে পারে। শুধু বাংলা কেন, কোনো ভাষার ছন্দের আর-কোনোপ্রকার ভাগ হইতে পারে বলিয়া মনে করিতে পারি না। তবে প্রভেদ হয় কিলে । মাত্রাগুলির চেহারায় । ū সংস্কৃতভাষায় অসমান স্বর ও ব্যঞ্জনগুলিকে কৌশলে মিলাইয়া সমান মাত্রায় ভাগ করিতে হয়, তাহাতে ধ্বনির বৈচিত্র্য ও গাম্ভীর্ধ ঘটে । যথা— | | | | বদলি যদি | কিঞ্চিদপি | দস্তকচি ৷ কৌমুদী | | | হরতি দর । তিমিরমতি | ঘোরম। ইহ পাচ মাত্রা অর্থাৎ বিষম মাত্রার ছন্দ । বাঙালি জয়দেব তাহার গানে সংস্কৃতভাষার যুক্তবর্ণের বেণী যথাসম্ভব এলাইয়া দিতে ভালোবাসিতেন, এইজন্ত উপরের উদ্ভূত শ্লোকাংশটি যথেষ্ট ভালো দৃষ্টান্ত নহে। তবু ইহাতে আমার কথাটি বুঝা যাইবে । ইহার প্রত্যেক বেণকে যে পাঁচ মাত্রা পড়িয়াছে তাহার ভাগ এইরূপ— ه + د +ه | د + د + د +ه | د + د + د H- ٤ | د + د + د + د + د >+ン+〉+〉+ > | >+>+>+>+> | ミ+R+ー বাংলাভাষার সাধু ছন্দে একের মাঝে মাঝে দুই বসিবার জায়গা পায় না, এ কথা পূর্বেই বলিয়াছি। উপরের কবিতাটুকু বাংলায় তর্জমা করিতে হইলে নিম্নলিখিত-মত হইবে— বচন যদি ৷ কহ গো জুটি দশনরুচি ৷ উঠিবে ফুটি, ঘুচাবে মোর | মনের ঘোর | তামসী ।