পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२९ রবীন্দ্র-রচনাবলী আধাঘোমটা-টানা সাবধান চাল তার নয় । এই গেল আমার পুনশ্চ’ কাব্যগ্রন্থের কৈফিয়ত । আরো-একটা পুনশ্চ-নাচের আসরে নাট্যাচার্য হয়ে বসব না, এমন পণ করি নি । কেবলমাত্র কাব্যের অধিকারকে বাড়াব মনে করেই একটা দিকের বেড়ায় গেট বলিয়েছি । এবারকার মতো আমার কাজ ওই পর্যন্ত । সময় তো বেশি নেই। এর পরে আবার কোন খেয়াল আসবে বলতে পারি নে। যারা দৈবদুর্যোগে মনে করবেন, গদ্যে কাব্যরচনা সহজ, তারা এই খোলা দরজাটার কাছে ভিড় করবেন সন্দেহ নেই। তা নিয়ে ফৌজদারি বাধলে আমাকে স্বদলের লোক বলে স্বপক্ষে সাক্ষী মেনে বলবেন। সেই দুর্দিনের পূর্বেই নিরুদ্ধেশ হওয়া ভালো। এর পরে মন্ত্রচিত আরো একখানা কাব্যগ্রন্থ বেরবে, তার নাম ‘বিচিত্রিতা’ । সেটা দেখে ভদ্রলোকে এই মনে করে আশ্বস্ত হবে যে, আমি পুনশ্চ প্রকৃতিস্থ হয়েছি ।. দেওয়ালি ১৩৩৯ 8 সম্প্রতি কতকগুলো গদ্যকবিতা জড়ো করে শেষসপ্তক’ নাম দিয়ে একখানি বই বের করেছি। সমালোচকরা ভেবে পাচ্ছেন না ঠিক কী বলবেন । একটা কিছু সংজ্ঞা দিতে হবে, তাই বলছেন আত্মজৈবনিক । অসম্ভব নয়, কিন্তু তাতে বলা হল না, এগুলো কবিতা কিম্বা কবিতা নয় কিম্বা কোন দরের কবিতা । এদের সম্বন্ধে মুখ্য কথা যদি এই হয় যে, এতে কবির আত্মজীবনের পরিচয় আছে, তা হলে পাঠক অসহিষ্ণু হয়ে বলতে পারে, আমার তাতে কী । মদের গেলালে যদি রঙকরা জল রাখা যায় তা হলে মদের হিসাবেই ওর বিচার আপনি উঠে পড়ে। কিন্তু, পাথরের বাটিতে রঙিন পানীয় দেখলে মনের মধ্যে গোড়াতেই তর্ক ওঠে, ওটা শরবত না ওষুধ । এরকম দ্বিধার মধ্যে পড়ে সমালোচক এই কথাটার পরেই জোর দেন যে, বাটিটা জয়পুরের কি মুঙ্গেরের। হায় রে, রসের যাচাই করতে যেখানে পিপাস্ক এসেছিল সেখানে মিলল পাথরের বিচার । আমি কাব্যের পসারি, আমি শুধোই— লেখাগুলোর ভিতরে ভিতরে কি স্বাদ নেই, ভঙ্গি নেই, থেকে থেকে কটাক্ষ নেই, সদর দরজার চেয়ে এর খিড়কির দ্বারের দিকেই কি ইশারা নেই, গদ্যের বকুনির মুখে রাস টেনে ধরে তার মধ্যে কি কোথাও ভুলকির চাল আনা হয় নি, চিন্তাগর্ত কথার মুখে কোনোখানে অচিস্ত্যের ইঙ্গিত কি লাগল না, এর মধ্যে ছন্দোরাজকতার নিয়ন্ত্রিত শাসন না থাকলেও আত্মরাজকতার অনিয়ন্ত্রিত সংযম নেই কি ! সেই সংঘমের গুণে থেমে-যাওয়া কিম্বা