পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89o রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখা যাচ্ছে, এখানে পদশেষের অংশটিকে খর্ব করা হয়েছে। যদি লেখা যেত— আঁধার রাতি জেলেছে বাতি আকাশ ভরি অযুত তারা তা হলে ছন্দের কাছে দেনা বাকি থাকত না । কিন্তু, পূর্বোক্ত প্রথম শ্লোকটির পদশেষে পাচ মাত্রার থেকে তিন মাত্রাকে জবাব দেওয়া হয়েছে । তা হলে বুঝতে হবে, সেই তিন মাত্রা দেহত্যাগ করে ওইখানেই বসে আছে যতিকে ভর করে । কিন্তু, এই কৈফিয়তটা সম্পূর্ণ হল বলে মনে হয় না, আরো কথা আছে। প্রকৃতির কাজের অলংকরণতত্ত্বটা আলোচ্য। দুই পা দুই হাত নিয়ে দেহটা দাড়ালো, দুই কাধে দুটো মুগু বসালেই সম্মিতি অর্থাৎ symmetry ঘটত। তা না করে দুষ্ট কাধের মাঝখানে একটি মুণ্ড বসিয়ে সমাপ্তিটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কৃষ্ণচুড়ার গাছে ডাটার দু ধারে দুটি করে পত্রগুচ্ছ চলতে চলতে প্রাস্তে এসে থামল একটিমাত্র গুচ্ছে । অলংকরণের ধারা যেখানে পূর্ণ হয়েছে সেখানে একটিমাত্র তর্জনী, ছোটো একটি ইশারা । সকল ভাষারই যতি আছে, কিন্তু ধতিকে বাটখারাস্বরূপ করে ছন্দের ওজন পূরণ বাংলা ছন্দ ছাড়া আর কোনো ছন্দে আছে কি না জানি নে । সংস্কৃত ছন্দে এই রীতি বিরল, তবু একেবারে পাওয়া যায় না তা নয় । বদলি যদি কিঞ্চিদপি দস্তরুচিকৌমুদী হরতি দরতিমিরমতি ঘোরম • • । Wh যতিকে কেবল বিরতির স্থান না দিয়ে তাকে পূর্তির কাজে লাগাবার অভ্যাস আরম্ভ হয়েছে আমাদের ছড়ার ছন্দ থেকে। ছড়া আবৃত্তি করবার সময় আপনি যতির জোগান দেয় অামাদের কান | কণক কালো বটে, পিক সেও কালো, কালো সে ফিঙের বেশ, তাহার অধিক কালো যে, কন্যা, তোমার চিকন কেশ । এমন করে ছন্দটাকে পুরোপুরি ভরিয়ে দিলে কানের কাছে ঋণী হতে হত না । কিন্তু, এতে ছড়ার জাত যেত। ছড়ার রীতি এই যে, সে কিছু ধ্বনি জোগায় নিজে, কিছু আদায় করে কণ্ঠের কাছ থেকে ; এ দুইয়ের মিলনে রে হয় পূর্ণ। প্রকৃতি আমের মধুরতায় জল মিশিয়েছেন, তাকে আমসত্ব করে তোলেন নি; সেজন্তে রসজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই