পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88२ রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্যায় হবে না ? আমার দৃষ্টাস্তে দৈবক্রমে 'কই' কথাটা পদের শেষে পড়ে গেছে। তাই ফাক পেয়ে সেই ফাকির উপর দিয়ে মাত্রাট চালিয়েছ কিন্তু যদি “কই শয্যা, কই বস্ত্ৰ” হত তা হলে কী রকম করে এমন অবৈধাচরণ করতে পারতে ? বস্তুত ইকারের পরে ফাক নেই– ক-এর অ-টাকে দীর্ঘ করে ই-এর হ্রস্বতা পূরণ করা হয় । সে তো সকল হসন্ত বর্ণের সম্বন্ধেই খাটে— “কোথা জল, কোথা স্থল”— এখানে মাত্রার ওজন যদি দেখ তবে দেখবে ‘জ যত বড়ো ল’ তত বড়ে নয়— সেইজন্যে জ-টাকে দেড় মাত্রা করতে হয়েছে। তোমার বিধি অনুসারে 'জল'-কে এক মাত্রা করে ফাকের উপরে আর-এক মাত্রা ফেলতে হয় । কিন্তু সেটা সাধু ছন্দের নিয়মবিরুদ্ধ। “সেইত বহিছে বায়ু, এখানে তুমি সেই’-এর ‘ই’-টিকে কি বিমাত্র বলে গণ্য করবে।

  • When we two parted” কবিতাটির সম্বন্ধে অনেক দ্বিধা আমার মনে উদয় হয়েছিল কিন্তু শেষকালে অন্য কোনো দৃষ্টাস্ত মনে না পড়াতে ওটাকে ত্যাগ করি নি— আমার অভিপ্রায় এই ছিল, যদি কেবলমাত্র প্রথম লাইনটা পড়া যায় তা হলে সম-অসম মাত্রার ছন্দের লয়ট ইংরেজের কানে পরিচিত হতে পারে— মনে কর যদি এমন হত—

When we two parted Silence and tears তা হলে তো ছন্দভঙ্গ হত না— এমন অবস্থায় ‘In' টাকে ফালতো বলে ধরবার অধিকার অাছে। বস্তুত ছন্দের মধ্যে ফালতো অংশের লক্ষণই এই যে, সেটাকে বাদ দিলে মূল ছন্দের তাল কাটে না-ও জিনিসটা ফাকের মধ্যে ঢুকে পড়ে, আসনে ওর স্থান নেই। তথাপি আমার প্রবন্ধটার মধ্যে একটু বদল করে দেওয়া গেল— কিন্তু আমার বোধ হয় ষে সেটা অনাবশুক । অধ্যাপক ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত তৃতীয় ও পঞ্চম পত্ৰৰয় ‘কাব্যে গদ্যরীতি’ নামে ১৩৫০ সালে ‘সাহিত্যের স্বরূপ’ গ্রন্থে মুদ্রিত হইয়াছে। চিঠিপত্র-অংশের পূর্ণতাসাধনের উদ্দেশে পত্র দুইটি পরিশিষ্টে সংকলিত হইল । ‘মোটকথা’র পদ্যছন্দ’ অংশটি বস্তুত ১৩৪০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠত ও ১৩৪১ বৈশাখের ‘উদয়ন” মাসিকপত্রে ‘ছন্দ’ নামে প্রকাশিত প্রবন্ধের একাংশ । উক্ত প্রবন্ধটির এতদতিরিক্ত প্রধান অংশ ‘বাংলা-ছন্দের প্রকৃতি’ নামে মূলগ্রন্থে সংকলিত হইয়াছে। 蟲 মোটকথা’র গদ্যছন্দ’ অংশটি কবি সঙ্কর ভট্টাচার্ধকে ১৯৩৫ সালের ২২ মে তারিখে পত্রাকারে লিখিত হইয়াছিল । (,