পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন ৩১৫ জয়োত্তম। কোনো কথার শেষ উত্তর নেই বলেই দেন না। মুর্থ যারা তারাই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, যার অল্প জানে তারাই জবাব দেয় ; আর যারা বেশি জানে তারা জানে ষে জবাব দেওয়া যায় না । 醯 পঞ্চক। সেইজন্তেই উপাধ্যায়মশায় যখন শাস্ত্র থেকে প্রশ্ন করেন তোমরা জবাব দাও, কিন্তু আমি একেবারে মূক হয়ে থাকি। জয়োত্তম। কিন্তু প্রশ্ন না করতেই যে কথাগুলো বল তাতেই— পঞ্চক। হা, তাতেই আমার খ্যাতি রটে গেছে, নইলে কেউ আমাকে চিনতেই পারত না । বিশ্বম্ভর । দেখো পঞ্চক, যদি গুরু আসেন তা হলে তোমার জন্তে আমাদের সকলকেই লজ্জা পেতে হবে । সঞ্জীৱ । আটান্ন প্রকার আচমনবিধির মধ্যে পঞ্চক বড়োজোর পাচটা প্রকরণ এতদিনে শিখেছে। পঞ্চক। সঙ্গীব, আমার মনে আঘাত দিয়ে না। অত্যুক্তি করছ। সঞ্জীব । অত্যুক্তি ! পঞ্চক। অত্যুক্তি নয় তো কী! তুমি বলছ পাচটা শিখেছি। আমি দুটোর বেশি একটাও শিখি নি। তৃতীয় প্রকরণে মধ্যমাঙ্গুলির কোন পর্বটা কতবার কতখানি জলে ডুবোতে হবে সেটা ঠিক করতে গিয়ে অন্ত আঙুলের অস্তিত্বই ভুলে যাই। কেবল একমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটা আমার খুব অভ্যাস হয়ে গেছে। হাসছ কেন ? বিশ্বাস করছ না বুঝি ? জয়োত্তম । বিশ্বাস করা শক্ত । H পঞ্চক। সেদিন উপাধ্যায়মশায় যখন পরীক্ষা করতে এলেন তখন তাকে ঐ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ পর্যন্ত দেখিয়ে বিস্মিত করবার চেষ্টায় ছিলুম, কিন্তু তিনি চোখ পাকিয়ে তর্জনী তুললেন, আমার আর এগোল না। বিশ্বম্ভর । না পঞ্চক, এবার গুরু আসার জন্যে তোমাকে প্রস্তুত হতে হবে। পঞ্চক। পঞ্চক পৃথিবীতে যেমন অপ্রস্তুত হয়ে জন্মেছে তেমনি অপ্রস্তুত হয়েই মরবে ; ওর ঐ একটি মহাগুণ আছে, ওর কখনো বদল হয় না । সঞ্জীব । তোমার সেই গুণে উপাধ্যায়মশায়কে ষে মুগ্ধ করতে পেরেছ তা তো বোধ হয় না । পঞ্চক। আমি তাকে কত বোঝাবার চেষ্টা করি ষে, বিদ্যা সম্বন্ধে আমার একটুও নড়চড় নেই— ঐ যাকে বল ধ্রুবনক্ষত্ৰ— তাতে স্থবিধা এই যে, এখানকার ছাত্ররা কে কতদূর এগোল তা আমার সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে।