পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চারি দিকে সমস্তই বিচলিত হয়ে উঠেছে । আমার মনে হচ্ছে আমাদের এখানকার দেয়ালের প্রত্যেক পাথরটা পর্যন্ত বিচলিত। তুমি এটা অনুভব করতে পারছ না স্থতসোম ? উপাচার্য। কিছুমাত্র না। এখানকার অটল স্তব্ধতার লেশমাত্র বিচূতি দেখতে পাচ্ছি নে। আমাদের তো বিচলিত হবার কথাও না। আমাদের সমস্ত শিক্ষা কোন কালে সমাধা হয়ে গেছে। আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত । আচার্য। আজ আমার একটু একটু মনে পড়ছে বহুপূর্বে প্রথমে সেই ভোরের বেলা অন্ধকার থাকতে থাকতে যার কাছে শিক্ষা আরম্ভ করেছিলুম তিনি গুরুই—তিনি পুথি নন, শাস্ত্র নন, বৃত্তি নন, তিনি গুরু । তিনি যা ধরিয়ে দিলেন তাই নিয়ে আরম্ভ করলুম— এতদিন মনে করে নিশ্চিন্ত ছিলুম সেইটেই বুঝি আছে, ঠিক চলছে—কিন্তু— উপাচার্য। ঠিক আছে, ঠিক চলছে আচার্যদেব, ভয় নেই। প্রভু, আমাদের এখানে সেই প্রথম উষার বিশুদ্ধ অন্ধকারকে হাজার বছরেও নষ্ট হতে দিই নি। তারই পবিত্র অস্পষ্ট ছায়ার মধ্যে আমরা আচার্য এবং ছাত্র, প্রবীণ এবং নবীন, সকলেই স্থির হয়ে বসে আছি। তুমি কি বলতে চাও এতদিন পরে কেউ এসে সেই আমাদের ছায়৷ নাড়িয়ে দিয়ে যাবে ! সর্বনাশ ! সেই ছায়া ! আচার্য। সর্বনাশই তো ! উপাচার্য। তা হলে হবে কী ! এতদিন যারা স্তব্ধ হয়ে আছে তাদের কি আবার উঠতে হবে ? আচার্য । আমি তো তাই সামনে দেখছি। সে কি আমার স্বপ্ন ! অথচ আমার তো মনে হচ্ছে এই সমস্তই স্বপ্ন— এই পাথরের প্রাচীর, এই বন্ধ দরজা, এই-সব নানা রেখার গণ্ডি, এই স্তুপাকার পুথি, এই অহোরাত্র মন্ত্রপাঠের গুঞ্জনধ্বনি— সমস্তই স্বপ্ন । উপাচার্য। ঐ-যে পঞ্চক আসছে। পাথরের মধ্যে কি ঘাস বেরোয় ! এমন ছেলে আমাদের আয়তনে কী করে সম্ভব হল ! শিশুকাল থেকেই ওর ভিতর এমনএকটা প্রবল অনিয়ম আছে, তাকে কিছুতেই দমন করা গেল না। ঐ বালককে আমার ভয় হয়। ঐ আমাদের দুর্লক্ষণ । এই আয়তনের মধ্যে ও কেবল তোমাকেই মানে। তুমি ওকে একটু ভংসনা করে দিয়ে। আচার্য। আচ্ছা, তুমি যাও। আমি ওর সঙ্গে একটু নিভৃতে কথা কয়ে দেখি। [ উপাচার্যের প্রস্থান পঞ্চকের প্রবেশ আচার্য । ( পঞ্চকের গায়ে হাত দিয়া ) বৎস পঞ্চক !