পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন ৩২৫ পঞ্চক। করলেন কী ! আমাকে ছুলেন ? আচার্য। কেন, বাধা কী আছে ? পঞ্চক । আমি যে আচার রক্ষা করতে পারি নি । আচার্য । কেন পার নি বৎস ? পঞ্চক। প্রভু, কেন, তা আমি বলতে পারি নে। আমার পারবার উপায় নেই। আচার্য। সৌম্য, তুমি তো জানো, এখানকার ষে নিয়ম সেই নিয়মকে আশ্রয় করে হাজার বছর হাজার হাজার লোক নিশ্চিন্ত আছে। আমরা যে-খুশি তাকে কি ভাঙতে পারি ? পঞ্চক । আচার্যদেব, যে নিয়ম সত্য তাকে ভাঙতে না দিলে তার যে পরীক্ষা হয় না । আচার্য। নিয়মের জন্ত ভয় নয়, কিন্তু যে লোক ভাঙতে যাবে তারই বা দুৰ্গতি ঘটতে দেব কেন ? পঞ্চক। আমি কোনো তর্ক করব না। আপনি নিজমুখে যদি আদেশ করেন যে, আমাকে সমস্ত নিয়ম পালন করতেই হবে তা হলে পালন করব। আমি আচারঅনুষ্ঠান কিছুই জানি নে, আমি আপনাকেই জানি । আচার্য। আদেশ করব – তোমাকে ! সে আর আমার দ্বারা হয়ে উঠবে না। পঞ্চক। কেন আদেশ করবেন না প্রভু। আচার্য। কেন ? বলব বৎস ? তোমাকে যখন দেখি আমি মুক্তিকে যেন চোখে দেখতে পাই। এত চাপেও যখন দেখলুম তোমার মধ্যে প্রাণ কিছুতেই মরতে চায় না তখনই আমি প্রথম বুঝতে পারলুম মানুষের মন মস্ত্রের চেয়ে সত্য, হাজার বছরের অতিপ্রাচীন আচারের চেয়ে সত্য। যাও বৎস, তোমার পথে তুমি যাও। আমাকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা কোরো না । পঞ্চক । আচার্যদেব, আপনি জানেন না কিন্তু আপনিই আমাকে নিয়মের চাকার নীচে থেকে টেনে নিয়েছেন । আচার্য। কেমন করে বৎস ? পঞ্চক। তা জানি নে, কিন্তু আপনি আমাকে এমন একটা-কিছু দিয়েছেন যা আচারের চেয়ে নিয়মের চেয়ে অনেক বেশি। আচার্য। তুমি কী কর না-কর আমি কোনোদিন জিজ্ঞাসা করি নে, কিন্তু আজ একটি কথা জিজ্ঞাসা করব। তুমি কি অচলায়তনের বাইরে গিয়ে শোণপাংশু-জাতির সঙ্গে মেশ ?