পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eరి রবীন্দ্র-রচনাবলী ” ” প্রথম শোণপাংশু। আমাদের কথা বল কেন ? উপবাসের দিনে খেসারিডাল যদি গোফের উপর পর্যন্ত এগিয়ে আসে তা হলে তাকে আরো একটু এগিয়ে নিই। পঞ্চক। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি করে বলিস— তোরা কি লোহার কাজ করে থাকিস ? প্রথম শোণপাংশু। লোহার কাজ করি বৈকি, খুব করি। পঞ্চক। রাম । রাম ! আমরা সনাতন কাল থেকে কেবল তামা-পিতলের কাজ করে আসছি। লোহা গলাতে পারি কিন্তু সব দিন নয়। ষষ্ঠীর দিনে যদি মঙ্গলবার পড়ে তবেই স্নান করে আমরা হাপর ছুতে পারি, কিন্তু তাই বলে লোহা পিটোনো— সে তো হতেই পারে না ! তৃতীয় শোণপাংশু। আমরা লোহার কাজ করি তাই লোহাও আমাদের কাজ করে । [. গান কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, ও তার ঘুম ভাঙাইচু রে! লক্ষযুগের অন্ধকারে ছিল সংগোপন, ওগো, তায় জাগাইচু রে । পোষ মেনেছে হাতের তলে, যা বলাই সে তেমনি বলে, দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইচু রে । অচল ছিল, সচল হয়ে ছুটেছে ওই জগৎ জয়ে, নিৰ্ভয়ে আজ দুই হাতে তার রাশ বাগাইচু রে । পঞ্চক। সেদিন উপাধ্যায়মশায় একঘর ছাত্রের সামনে বললেন শোণপাংশু জাতটা এমনই বিত্র ষে, তারা নিজের হাতে লোহার কাজ করে। আমি তাকে বললুম, ও বেচারারা পড়াশুনে কিছুই করে নি সে আমি জানি– এমন-কি, এই পৃথিবীটা যে ত্রিশিরা রাক্ষসীর মাথামুড়োনো চুলের জটা দিয়ে তৈরি তাও ঐ মূখেরা জানে না, আবার সে কথা বলতে গেলে মারতে আসে– তাই ব’লে ভালোমন্দর জ্ঞান কি ওদের এতটুকুও নেই যে, লোহার কাজ নিজের হাতে করবে। আজ তো স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি, যার যে বংশে জন্ম তার সেইরকম বুদ্ধিই হয়। প্রথম শোণপাংশু । কেন, লোহা কী অপরাধটা করেছে।