পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

అలు রবীন্দ্র-রচনাবলী পশুপাখি গাছপালা আমার কাছে আর কিছুই ছোটো থাকে না। এমন-কি, তখন ঐ শোণপাংশুদের সঙ্গে মাতামাতি করতেও অামার আর বাধে না । দাদাঠাকুর। আমিও যে ওদের সঙ্গে খেলে বেড়াই সে খেলা আমার কাছে মস্ত খেলা। অামার মনে হয় আমি ঝরনার ধারার সঙ্গে খেলছি, সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছি । পঞ্চক। তোমার কাছে সবই বড়ো হয়ে গিয়েছে । দাদাঠাকুর । না ভাই, বড়ো হয় নি, সত্য হয়ে উঠেছে– সত্য যে বড়োই, ছোটোই তো মিথ্যা । পঞ্চক । তোমার বাধা কেটে গেছে দাদাঠাকুর, সব বাধা কেটে গেছে। এমন হাসতে খেলতে, মিলতে মিশতে, কাজ করতে, কাজ ছাড়তে কে পারে ! তোমার ঐ ভাব দেখে আমার মনটা ছট্‌ফট্‌ করতে থাকে। ঐ-ষে কী-একটা আছে– চরম, না পরম, না কী, তা কে বলবে— তার জন্যে দিনরাত যেন আমার মন কেমন করে। থেকে থেকে এক-একবার চমকে উঠি, আর ভাবি এইবার বুঝি হল, বুঝি পাওয়৷ গেল। দাদাঠাকুর, শুনছি আমাদের গুরু আসবেন। দাদাঠাকুর। গুরু ! কী বিপদ। ভারি উৎপাত করবে তা হলে তো । পঞ্চক। একটু উৎপাত হলে যে বাচি। চুপচাপ থেকে প্রাণ হাপিয়ে উঠছে। দাদাঠাকুর । তোমার ষে শিক্ষা কাচা রয়েছে, মনে ভয় হচ্ছে না ? পঞ্চক। আমার ভয় সব চেয়ে কম— আমার একটি ভুলও হবে না। দাদাঠাকুর । হবে না ? পঞ্চক। একেবারে কিছুই জানি নে, ভুল করবার জায়গাই নেই। নিৰ্ভয়ে চুপ করে থাকব । দাদাঠাকুর । আচ্ছা বেশ, তোমার গুরু এলে তাকে দেখে নেওয়া যাবে। এখন তুমি আছ কেমন বলে তো । পঞ্চক। ভয়ানক টানাটানির মধ্যে আছি ঠাকুর । মনে মনে প্রার্থনা করছি গুরু এসে যে দিকে হোক এক দিকে আমাকে ঠিক করে রাখুন— হয় এখানকার খোলা হাওয়ার মধ্যে অভয় দিয়ে ছাড়া দিন, নয় তো খুব কষে পুথি চাপা দিয়ে রাখুন ; মাথ৷ থেকে পা পর্যন্ত আগাগোড়া একেবারে সমান চ্যাপট হয়ে যাই । দাদাঠাকুর । তা, তোমার গুরু তোমার উপর ষত পুথির চাপই চাপান-না কেন তার নীচের থেকে তোমাকে আস্ত টেনে বের করে আনতে পারব। $ পঞ্চক। তা তুমি পারবে সে আমি জানি। কিন্তু দেখো ঠাকুর, একটা কথা