পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন "లిలసి তোমাকে বলি– অচলায়তনের মধ্যে ঐ-যে আমরা দরজা বন্ধ করে আছি, দিব্যি আছি । ওখানে আমাদের সমস্ত বোঝাপড়া একেবারে শেষ হয়ে গেছে। ওখানকার মানুষ সেইজন্তে বড়ো নিশ্চিন্ত। কিছুতে কারে একটু সন্দেহ হবার জো নেই। যদি দৈবাৎ কারো মনে এমন প্রশ্ন ওঠে যে, আচ্ছা ঐ-যে চন্দ্রগ্রহণের দিনে শোবার ঘরের দেওয়ালে তিনবার সাদা ছাগলের দাড়ি বুলিয়ে দিয়ে আওড়াতে হয় “হন হন তিষ্ঠ তিষ্ঠ বদ্ধ বন্ধ অমৃতে ই ফট স্বাহা” এর কারণটা কী— তা হলে কেবলমাত্র চারটেস্বপুরি আর এক মাষা সোনা হাতে করে যাও তখনই মহাপঞ্চকদাদার কাছে, এমনি উত্তরটি পাবে যে আর কথা সরবে না। হয় সেটা মানো, নয় কানমলা খেয়ে বেরিয়ে যাও, মাঝে অন্ত রাস্ত নেই। তাই সমস্তই চমৎকার সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু ঠাকুর, সেখান থেকে বের করে তুমি আমাকে এই যে জায়গাটাতে এনেছ এখানে কোনো মহাপঞ্চকদাদার টিকি দেখবার জো নেই– বাধা জবাব পাই কার কাছে। সব কথারই বারো-আনা বাকি থেকে যায়। তুমি এমন করে মনটাকে উতলা করে দিলে— তার পর ? দাদাঠাকুর। তার পরে ? গান যা হবার তা হবে । যে আমাকে কাদায় সে কি আমনি ছেড়ে রবে । পথ হতে যে ভুলিয়ে আনে, পথ যে কোথায় সেই তা জানে, ঘর যে ছাড়ায় হাত সে বাড়ায় সেই তো ঘরে লবে। পঞ্চক। এতবড়ো ভরসা তুমি কেমন করে দিচ্ছ ঠাকুর । তুমি কোনো ভয় কোনো ভাবনাই রাখতে দেবে না, অথচ জন্মাবধি আমাদের ভয়ের অস্ত নেই। মৃত্যুভয়ের জন্তে অমিতায়ুৰ্ধারিণী মন্ত্র পড়ছি শত্রুভয়ের জন্তে মহাসাহস্রপ্রমর্দিনী, ঘরের ভয়ের জন্তে গৃহমাতৃকা, বাইরের ভয়ের জন্তে অভয়ংকরী, সাপের ভয়ের জন্তে মহামযুরী, বঙ্গভয়ের জন্যে বজগান্ধারী, ভূতের ভয়ের জন্তে চণ্ডভট্টারিকা, চোরের ভয়ের জন্তে হরাহরহাদয় । এমন আর কত নাম করব । দাদাঠাকুর । আমার বন্ধু এমন মন্ত্র আমাকে পড়িয়েছেন যে তাতে চিরদিনের জন্য ভয়ের বিষদাত ভেঙে যায়। পঞ্চক। তোমাকে দেখে তা বোঝা যায়। কিন্তু সেই বন্ধুকে পেলে কোথা ठांकूझ । দাদাঠাকুর। পাবই বলে সাহস করে বুক বাড়িয়ে দিলুম, তাই পেলুম। কোথাও যেতে হয় নি । *