পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

988 রবীন্দ্র-রচনাবলী ওগো দিনের পরে দিন আমার কোথায় হল লীন, কেবল ভাষাহারা অশ্রধারায় পরান কেঁদে উঠে । আচ্ছা দাদাঠাকুর, তোমাকে আর কাদতে হয় না ? তুমি যার কথা বল তিনি তোমার চোখের জল মুছিয়েছেন ? 鸭 দাদাঠাকুর । তিনি চোখের জল মোছান, কিন্তু চোখের জল ঘোচান না । পঞ্চক। কিন্তু দাদা, আমি তোমার ঐ শোণপাংশুদের দেখি আর মনে ভাবি, ওরা চোখের জল ফেলতে শেখে নি। ওদের কি তুমি একেবারেই কাদাতে চাও না । দাদাঠাকুর । যেখানে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে না সেখানে খাল কেটে জল আনতে হয়। ওদেরও রসের দরকার হবে, তখন দূর থেকে বয়ে আনযে। কিন্তু দেখেছি ওরা বর্ষণ চায় না, তাতে ওদের কাজ কামাই যায়, সে ওরা কিছুতেই সহ করতে পারে না, ঐ রকমই ওদের স্বভাব । পঞ্চক। ঠাকুর, আমি তো সেই বর্ষণের জন্যে তাকিয়ে আছি। যতদূর শুকোবার তা শুকিয়েছে, কোথাও একটু সবুজ আর কিছু বাকি নেই, এইবার তো সময় হয়েছে— মনে হচ্ছে যেন দূর থেকে গুরু গুরু ডাক শুনতে পাচ্ছি। বুঝি এবার ঘন নীল মেম্বে তপ্ত আকাশ জুড়িয়ে যাবে, ভরে যাবে। গান দাদাঠাকুর। বুঝি এল, বুঝি এল, ওরে প্রাণ ! এবার ধর দেখি তোর গান। ঘাসে ঘাসে খবর ছোটে ধরা বুঝি শিউরে ওঠে, দিগন্তে ওই স্তব্ধ আকাশ পেতে আছে কান। পঞ্চক । ঠাকুর, আমার বুকের মধ্যে কী আনন্দ যে লাগছে সে আমি বলে উঠতে পারি নে। এই মাটিকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। ডাকো ডাকে, তোমার একটা ডাক দিয়ে এই আকাশ ছেয়ে ফেলো । গান আজ যেমন করে গাইছে আকাশ তেমনি করে গাও গো ।