পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন । \లీ8ఫి সামনে আমার বিচারের দিন এসেছে । আমি স্বীকার করছি অপরাধের অন্ত নেই, অস্ত নেই, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে । তৃণাঞ্জন। তবে আর দেরি করেন কেন। এ দিকে যে আমাদের সর্বনাশ হয়। জয়োত্তম। দেখে তৃণাঞ্জন, আঁস্তাকুড়ের ছাই দিয়ে তোমার এই মুখের গর্তটা ভরিয়ে দিতে হবে। একটু থামো না। আচার্য। গুরু চলে গেলেন, আমরা তার জায়গায় পুথি নিয়ে বসলুম ; তার শুকনো পাতায় ক্ষুধা যতই মেটে না ততই পুথি কেবল বাড়াতে থাকি। খাদ্যের মধ্যে প্রাণ যতই কমে তার পরিমাণ ততই বেশি হয়। সেই জীর্ণ পুথির ভাণ্ডারে প্রতিদিন তোমরা দলে দলে আমার কাছে তোমাদের তরুণ হৃদয়টি মেলে ধরে কী চাইতে এসেছিলে! অমৃতবাণী ? কিন্তু আমার তালু যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ! রসনায় যে রসের লেশমাত্র নেই! এবার নিয়ে এসো সেই বাণী, গুরু, নিয়ে এসো হৃদয়ের বাণী ! প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও ! পঞ্চক। (ছুটিয়া প্রবেশ করিয়া ) তোমার নববর্ষার সজল হাওয়ায় উড়ে যাক সব শুকনো পাতা— আয় রে নবীন কিশলয়— তোরা ছুটে আয়, তোরা ফুটে বেরো। ভাই জয়োত্তম, শুনছ না, আকাশের ঘন নীল মেঘের মধ্যে মুক্তির ডাক উঠেছে—‘আজ নৃত্য কররে নৃত্য কর’। গান ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে তারে আজ থামায় কে রে ! সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে তারে আজ নামায় কে রে ! প্রথম জয়োত্তমের, পরে বিশ্বম্ভরের, পরে সঞ্জীবের মৃত্যগীতে যোগ মহাপঞ্চক। পঞ্চক, নির্লজ্জ বানর কোথাকার, থাম বলছি, থাম্‌ ! গান পঞ্চক । ওরে আমার মন মেতেছে অামারে থামায় কে রে । মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, আমি তোমাকে বলি নি একজটা দেবীর শাপ আরম্ভ হয়েছে ? দেখছ, কী করে তিনি আমাদের সকলের বুদ্ধিকে বিচলিত করে তুলছেন— ক্রমে দেখবে অচলায়তনের একটি পাথরও অার থাকবে না।