পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন ©® ፃ দশা হয়েছে যে, সহজ কথাটা কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোতে চায় না। আচার্যদেব, কেবল ভালো করে না ডাকতে পেরেই আমাদের বুকের ভিতরটা এমন শুকিয়ে এসেছে, একবার খুব করে গলা ছেড়ে ডাকতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু গলা খোলে না যে— রাজ্যের পুথি পড়ে পড়ে গলা বুজে গিয়েছে প্রভু। এমন হয়েছে আজ কান্না এলেও বেধে যায়। আচার্য । সেইজন্যেই তো ভাবছি আমাদের গুরু আসবেন কবে । জঞ্জাল সব ঠেলে ফেলে দিয়ে আমাদের প্রাণটাকে একেবারে সরল করে দিন— হাতে করে ধরে সকলের সঙ্গে মিল করিয়ে দিন । পঞ্চক। মনে হচ্ছে যেন ভিজে মাটির গন্ধ পাচ্ছি, কোথায় যেন বর্ষা নেমেছে। আচার্য। ঐ, পঞ্চক, শুনতে পাচ্ছ কি ? পঞ্চক। কী বলুন দেখি ? আচার্য । আমার মনে হচ্ছে যেন সুভদ্র র্কাদছে । পঞ্চক। এখান থেকে কি শোনা যাবে ? এ বোধ হয় আর-কোনো শব্দ । আচার্য। তা হবে পঞ্চক, আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি। তার কান্নাটা এমন করে আমাকে বেজেছে কেন জান ? সে যে কান্না রাখতে পারে না তবু কিছুতে মানতে চায় না সে র্কাদছে। পঞ্চক। এতক্ষণে ওরা তাকে মহাতামসে বসিয়েছে— আর সকলে মিলে খুব দূরে থেকে বাহবা দিয়ে বলছে স্বভদ্র দেবশিশু। আর কিছু না, আমি যদি রাজা হুতুম তা হলে ওদের সবাইকে কানে ধরে দেবতা করে দিতুম— কিছুতে ছাড়তুম না। আচার্য। ওরা ওদের দেবতাকে র্কাদাচ্ছে পঞ্চক । সেই দেবতারই কান্নায় এ রাজ্যের সকল আকাশ আকুল হয়ে উঠেছে। তবু ওদের পাষাণের বেড়া এখনো শতধ বিদীর্ণ হয়ে গেল না। stu পঞ্চক। প্রভু, আমরা তাকে সকলে মিলে কত কাদালুম তবু তাড়াতে পারলুম না। তাকে যে-ঘরে বসালুম সে-দ্বরের আলো সব নিবিয়ে দিলুম— তাকে আর দেখতে পাই নে— তবু তিনি সেখানে বসে আছেন। গান সকল জনম ভ’রে ও মোর দরদিয়া— কাদি কাদাই তোরে ও মোর দরদিয়া !