পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাকঘর । wore মাধব দত্ত। কবিরাজ বলছে তার ঐটুকু শরীরে একসঙ্গে বাত পিত্ত শ্লেষ্মা যেরকম প্রকুপিত হয়ে উঠেছে, তাতে তার আর বড়ো অাশা নেই। এখন একমাত্র উপায় তাকে কোনোরকমে এই শরতের রৌদ্র আর বাতাস থেকে বাচিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখা । ছেলেগুলোকে ঘরের বার করাই তোমার এই বুড়োবয়সের খেল— তাই তোমাকে ভয় করি । ঠাকুরদা। মিছে বল নি— একেবারে ভয়ানক হয়ে উঠেছি আমি, শরতের রৌদ্র আর হাওয়ারই মতো। কিন্তু ভাই, ঘরে ধরে রাখবার মতো খেলাও আমি কিছু জানি। আমার কাজকর্ম একটু সেরে আসি, তার পরে ঐ ছেলেটির সঙ্গে ভাব করে নেব । [ প্রস্থান অমল গুপ্তের প্রবেশ অমল। পিসেমশায়! মাধব দত্ত। কী আমল ? অমল। আমি কি ঐ উঠোনটাতেও যেতে পারব না ? মাধব দত্ত। না বাবা ! অমল। ঐ যেখানটাতে পিসিমা জাত দিয়ে ডাল ভাঙেন। ঐ দেখো না, যেখানে ভাঙা ডালের খুদগুলি দুই হাতে তুলে নিয়ে লেজের উপর ভর দিয়ে বসে কাঠবিড়ালি কুটুস কুটুস করে খাচ্ছে— ওখানে আমি যেতে পারব না ? মাধব দত্ত । না বাবা ! অমল। আমি যদি কাঠবিড়ালি হতুম তবে বেশ হত। কিন্তু পিসেমশায়, আমাকে কেন বেরোতে দেবে না ? মাধব দত্ত। কবিরাজ ষে বলেছে বাইরে গেলে তোমার অস্থখ করবে। অমল। কবিরাজ কেমন করে জানলে ? মাধব দত্ত । বল কী আমল! কবিরাজ জানবে না ! সে যে এত বড়ো বড়ো পুথি পড়ে ফেলেছে ! অমল। পুথি পড়লেই কি সমস্ত জানতে পারে ? মাধব দত্ত। বেশ ! তাও বুঝি জান না ! অমল। (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া) আমি ষে পুথি কিছুই পড়ি নি— তাই জানি নে। মাধব দত্ত। দেখো, বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা সব তোমারই মতো— তারা ঘর থেকে তো বেরোয় না ।