পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অমল । বেরোয় না ? মাধব দত্ত। না, কখন বেরোবে বলে । তারা বসে বসে কেবল পুথি পড়ে— আর-কোনো দিকেই তাদের চোখ নেই। অমলবাবু, তুমিও বড়ো হলে পণ্ডিত হবে— বসে বসে এই এত বড়ো বড়ো সব পুথি পড়বে— সবাই দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে। অমল। না না, পিসেমশায়, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আমি পণ্ডিত হব না— পিসেমশায়, আমি পণ্ডিত হব না। মাধব দত্ত। সে কী কথা অমল ! যদি পণ্ডিত হতে পারতুম, তা হলে আমি তো বেঁচে যেতুম। 驗 অমল। আমি, যা আছে সব দেখব— কেবলি দেখে বেড়াব । মাধব দত্ত। শোনো একবার ! দেখবে কী ? দেখবার এত অাছেই বা কী ? অমল। আমাদের জানলার কাছে বসে সেই-ষে দূরে পাহাড় দেখা যায়— আমার ভারি ইচ্ছে করে ঐ পাহাড়টা পার হয়ে চলে যাই । মাধব দত্ত । কী পাগলের মতো কথা ! কাজ নেই কর্ম নেই, খামক পাহাড়টা পার হয়ে চলে যাই! কী যে বলে তার ঠিক নেই। পাহাড়টা যখন মস্ত বেড়ার মতো উচু হয়ে আছে তখন তো বুঝতে হবে ওটা পেরিয়ে যাওয়া বারণ– নইলে এত বড়ে বড়ো পাথর জড়ো করে এতবড়ো একটা কাণ্ড করার দরকার কী ছিল ! অমল । পিসেমশায়, তোমার কি মনে হয় ও বারণ করছে ? আমার ঠিক বোধ হয় পৃথিবীটা কথা কইতে পারে না, তাই অমনি করে নীল আকাশে হাত তুলে ডাকছে। অনেক দূরের যার ঘরের মধ্যে বসে থাকে তারাও দুপুরবেলা একলা জানলার ধারে বসে ঐ ডাক শুনতে পায়। পণ্ডিতরা বুঝি শুনতে পায় না ? মাধব দত্ত । তারা তো তোমার মতো খেপা নয় – তারা শুনতে চায়ও না । অমল। আমার মতো খেপা আমি কালকে একজনকে দেখেছিলুম। মাধব দত্ত। সত্যি নাকি ? কী রকম শুনি । অমল। তার কাধে এক বাশের লাঠি। লাঠির আগায় একটা পুটুলি বাধা । তার বা হাতে একটা ঘাট । পুরানো একজোড়া নাগরাজুতো পরে সে এই মাঠের পথ দিয়ে ঐ পাহাড়ের দিকেই যাচ্ছিল। আমি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলুম, তুমি কোথায় যাচ্ছ ? সে বললে, কী জানি, যেখানে হয়। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কেন স্বাচ্ছ ? সে বললে, কাজ খুজতে যাচ্ছি। আচ্ছা পিসেমশায়, কাজ কি খুজতে छ्च ?