পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X 8. রবীন্দ্র-রচনাবলী বাংলা মাসের সঙ্গে ইংরেজি মাসের তারিখ জোড়া দিয়ে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে, তার পরে অকালে অপ্রত্যাশিত অতিথিসমাগমের আকস্মিক দায় পড়ে স্ত্রীর উপর। শশাঙ্ক নিশ্চয় জানে দিনযাত্রায় কোথাও ক্রটি ঘটলেই স্ত্রীর হাতে তার সংস্কার হবেই, তাই ক্রটি ঘটানোই তার স্বভাব হয়ে পড়েছে। স্ত্রী সম্মেহ তিরস্কারে বলে, *আর তো পারি নে। তোমার কি কিছুতেই শিক্ষা হবে না ।” যদি শিক্ষা হত তবে শমিলার দিনগুলো হত অনাবাদি ফসলের জমির মতো । শশাঙ্ক হয়তো বন্ধুমহলে নিমন্ত্রণে গেছে। রাত এগারোটা হল, দুপুর হল, ব্রিজ খেলা চলছে। হঠাৎ বন্ধুরা হেসে উঠল, "ওহে, তোমার সমনজারির পেয়াদ। সময় তোমার আসন্ন ৷” সেই চিরপরিচিত মহেশ চাকর। পাকা গোফ, কাচা মাথার চুল, গায়ে মেরজাই পরা, কাধে রঙিন ঝাড়ন, বগলে বাশের লাঠি। মাঠাকরুন খবর নিতে পাঠিয়েছেন বাবু কি আছেন এখানে ? মাঠাকরুনের ভয়, পাছে ফেরবার পথে অন্ধকার রাতে দুৰ্যোগ ঘটে। সঙ্গে একটা লণ্ঠনও পাঠিয়েছেন । শশাঙ্ক বিরক্ত হয়ে তাস ফেলে দিয়ে উঠে পড়ে। বন্ধুরা বলে, ”আহ, এক অরক্ষিত পুরুষমানুষ।” বাড়ি ফিরে এসে শশাঙ্ক স্ত্রীর সঙ্গে যে আলাপ করে সেটা ন। স্নিগ্ধ ভাষায় না শাস্ত ভঙ্গিতে। শৰ্মিলা চুপ করে ভংসন মেনে নেয়। কী করবে, পারে না থাকতে। যতপ্রকার অসম্ভব বিপত্তি ওর অনুপস্থিতির অপেক্ষায় স্বামীর পথে ষড়যন্ত্র করে এ আশঙ্কা ও কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারে না । বাইরে লোক এসেছে, হয়তো কাজের কথায় । ক্ষণে ক্ষণে অস্তঃপুর থেকে ছোটো ছোটো চিরকুট আসছে, “মনে আছে কাল তোমার অমুখ করেছিল। আজ সকাল সকাল খেতে এসো।” রাগ করে শশাঙ্ক, আবার হারও মানে । বড়ো দুঃখে একবার স্ত্রীকে বলেছিল, “দোহাই তোমার, চক্রবর্তীবাড়ির গিল্পীর মতো একটা ঠাকুরদেবতা আশ্রয় করে । তোমার মনোযোগ আমার একলার পক্ষে বেশি। দেবতার সঙ্গে সেটা ভাগাভাগি করে নিতে পারলে সহজ হয়। যতই বাড়াবাড়ি করে দেবত। আপত্তি করবেন না, কিন্তু মানুষ ষে দুর্বল।” শৰ্মিলা বললে, “হায় হায়, একবার কাকাবাবুর সঙ্গে যখন হরিদ্বার গিয়েছিলুম, মনে আছে তোমার অবস্থা ।” অবস্থাটা ধে অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছিল এ কথা শশাঙ্কই প্রচুর অলংকার দিয়ে একদা স্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করেছে। জানত এই অত্যুক্তিতে শৰ্মিলা যেমন অস্থতপ্ত