পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

দুই বোন 8めぬ একটা গেল ব্যাঙ্কের দিকে, আর-একটা ঘরের দিকে। শৰ্মিলার বরাদ পূর্বের মতোই আছে, সেখানকার দেনাপাওনার রহস্য শশাঙ্কর অগোচরে। আবার ব্যবসায়ের ঐ চামড়া-বাধানে হিসেবের খাতাটা শৰ্মিলার পক্ষে দুর্গম দুর্গবিশেষ। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু স্বামীর ব্যবসায়িক জীবনের কক্ষপথ ওর সংসারচক্রের বাইরে পড়ে যাওয়াতে সেই দিক থেকে ওর বিধিবিধান উপেক্ষিত হতে থাকে। মিনতি করে বলে, “বাড়াবাড়ি কোরো না, শরীর যাবে ভেঙে ’ কোনো ফল হয় না। আশ্চর্য এই, শরীরও ভাঙছে না । স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্‌বেগ, বিশ্রামের অভাব নিয়ে আক্ষেপ, আরামের খুটিনাটি নিয়ে ব্যস্ততা ইত্যাদি শ্রেণীর দাম্পত্যিক উৎকণ্ঠ সবেগে উপেক্ষ করে শশাঙ্ক সকালবেলায় সেকেও হ্যাগু, ফোর্ডগাড়ি নিজে হাকিয়ে শিঙে বাজিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বেলা দুটো-আড়াইটার সময় ঘরে ফিরে এসে বকুনি খায়, এবং আর-আর খাওয়াও দ্রুত হাত চালিয়ে শেষ করে। একদিন ওর মোটরগাড়ির সঙ্গে আর-কার গাড়ির ধাক্কা লাগল। নিজে গেল বেঁচে, গাড়িটা হল জখম, পাঠিয়ে দিল তাকে মেরামত করতে। শৰ্মিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল । বাষ্পাকুলকণ্ঠে বললে, “গাড়ি তুমি নিজে হাকাতে পারবে না।” শশাঙ্ক হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললে, “পরের হাতের আপদও একই জাতের দুষমন।” একদিন কোন মেরামতের কাজ তদন্ত করতে গিয়ে জুতো ফুড়ে পায়ে ফুটল ভাঙা প্যাকবাক্সর পেরেক, হাসপাতালে গিয়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ধতুষ্টংকারের টিকে নিলে, সেদিন কান্নাকাটি করলে শর্মিল ; বললে, “কিছুদিন থাকে৷ শুয়ে।” শশাঙ্ক অত্যন্ত সংক্ষেপে বললে, “কাজ।” এর চেয়ে বাক্য আর সংক্ষেপ করা যায় না । শৰ্মিলা বললে, “কিন্তু”— এবার বিনা বাক্যেই ব্যাগুেজমৃদ্ধ চলে গেল কাজে । জোর খাটাতে আর সাহস হয় না। আপন ক্ষেত্রে পুরুষের জোর দেখা দিয়েছে। যুক্তিতর্ক-কাকুতিমিনতির বাইরে একটিমাত্র কথা— কাজ আছে।’ শৰ্মিলা অকারণে উদবিগ্ন হয়ে বসে থাকে। দেরি হলেই ভাবে মোটরে বিপদ ঘটেছে। রোদস্তুর লাগিয়ে স্বামীর মুখ যখন দেখে রক্তবর্ণ, মনে করে নিশ্চয় ইনফ্লুয়েঞ্জা । ভয়ে ভয়ে আভাস দেয় ডাক্তারের – স্বামীর ভাবখান দেখে ঐখানেই থেমে যায়। মন খুলে উদবেগ প্রকাশ করতেও আজকাল ভরসা হয় না। শশাঙ্ক দেখতে দেখতে রোদে-পোড়া খট্‌খটে হয়ে উঠেছে। খাটো অঁাট কাপড়, খাটো অঁাট অবকাশ, চালচলন দ্রুত, কথাবার্তা ফুলিঙ্গের মতে সংক্ষিপ্ত । শৰ্মিলার সেবা এই দ্রুত লয়ের সঙ্গে তাল রেখে চলতে চেষ্টা করে। স্টোভের কাছে কিছু খাবার