পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s२४ রবীন্দ্র-রচনাবলী তখনে উদাসীন। উপস্থিত লক্ষ ছিল যুরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি-সংগ্রহের *দিকে। সেই উদ্দেশু মনে নিয়ে ফরাসি জর্মন শেখা শুরু করেছিল। আর কিছু হাতে না পেয়ে অনাবশুক হলেও আইন পড়া যখন আরম্ভ করেছে এমন সময় হেমস্তের অন্ত্রে কিম্বা শরীরে কোন ঘন্ত্রে কী একটা বিকার ঘটল ডাক্তারেরা কিছুই তার কিনারা পেলেন না। গোপনচারী রোগ সবল দেহে যেন দুর্গের আশ্রয় পেয়েছে, তার খোজ পাওয়া যেমন শক্ত হল তাকে আক্রমণ করাও তেমনি । সেকালের এক ইংরেজ ডাক্তারের উপর রাজারামের ছিল অবিচলিত আস্থা। অস্ত্রচিকিৎসায় লোকটি যশস্বী। রোগীর দেহে সন্ধান শুরু করলেন। অস্ত্রব্যবহারের অভ্যাসবশত অকুমান করলেন, দেহের দুর্গম গহনে বিপদ আছে বদ্ধমূল, সেটা উৎপাটনযোগ্য। অস্ত্রের স্থকৌশল সাহায্যে স্তর ভেদ করে যেখানটা অনাবৃত হল সেখানে কল্পিত শত্রুও নেই, তার অত্যাচারের চিহ্নও নেই । ভুল শোধরাবার রাস্তা রইল না, ছেলেটি মারা গেল । বাপের মনে বিষম দুঃখ কিছুতেই শাস্ত হতে চাইল না। মৃত্যু তাকে তত বাজে নি, কিন্তু আমন একটা সজীব সুন্দর বলিষ্ঠ দেহকে এমন করে খণ্ডিত করার স্মৃতিটা দিনরাত র্তার মনের মধ্যে কালো হিংস্ৰ পাখির মতো তীক্ষু নখ দিয়ে অঁাকড়ে ধরে রইল । মৰ্ম শোষণ করে টানলে তাকে মৃত্যুর মুখে । নতুন-পাস-করা ডাক্তার, হেমস্তের পূর্বসহাধ্যায়ী, নীরদ মুখুজে ছিল শুশ্রুষার সহায়তা-কাজে । বরাবর জোর করে সে বলে এসেছে, ভূল হচ্ছে। সে নিজে ব্যামোর একটা স্বরূপ নির্ণয় করেছিল, পরামর্শ দিয়েছিল দীর্ঘকাল শুকনো জায়গায় হাওয়া বদল করতে। কিন্তু রাজারামের মনে তাদের পৈত্রিক যুগের সংস্কার ছিল অটল । তিনি জানতেন যমের সঙ্গে দুঃসাধ্য লড়াই বাধলে তার উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী একমাত্র ইংরেজ ডাক্তার। এই ব্যাপারে নীরদের পরে অযথামাত্রায় তার স্নেহ ও শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। তার ছোটো মেয়ে উমির অকস্মাৎ মনে হল, এ মাকুষটার প্রতিভা অসামান্ত । বাবাকে বললে, “দেখো তো বাবা, অল্প বয়স অথচ নিজের পরে কী দৃঢ় বিশ্বাস আর অতবড়ে হাড়-চওড়া বিলিতি ডাক্তারের মতের বিরুদ্ধে নিজের মতকে নিঃসংশয়ে প্রচার করতে পারে এমন অসংকুচিত সাহস ।” বাবা বললেন, “ডাক্তারিবিস্তে কেবল শাস্ত্রগত নয় । কারে কারো মধ্যে থাকে ওটার দুর্লভ দৈব সংস্কার। নীরদের দেখছি তাই।” এদের ভক্তির শুরু হল একটা ছোটো প্রমাণ নিয়ে, শোকের আঘাতে, পরিতাপের বেদনায় । তার পরে প্রমাণের অপেক্ষা না করে সেটা আপনিই বেড়ে চলল । রাজারাম একদিন মেয়েকে বললেন, “দেখ, উমি, আমি যেন শুনতে পাই, হেমন্ত