পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8७२ রবীন্দ্র-রচনাবলী छैगिंभांब्नां নীরদ রিসার্চের যে কাজ নিয়েছিল সেটা সমাপ্ত হল। য়ুরোপের কোনো বৈজ্ঞানিকসমাজে লেখাটা পাঠিয়ে দিলে। তারা প্রশংসা করলে, তার সঙ্গে সঙ্গে একটা স্কলারশিপ জুটল— স্থির করলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী নেবার জন্তে সমূত্রে পাড়ি দেবে। বিদায় নেবার সময় কোনো করুণ আলাপ হল না। কেবল এই কথাটাই বারবার করে বললে যে, “আমি চলে যাচ্ছি, এখন তোমার কর্তব্যসাধনে শৈথিল্য করবে এই আমার আশঙ্কা ।” উমি বললে, “কোনো ভয় করবেন না।” নীরদ বললে, “কিরকম ভাবে চলতে হবে, পড়াশুনো করতে হবে, তার একটা বিস্তৃত নোট দিয়ে যাচ্ছি।” উমি বললে, “আমি ঠিক সেই অনুসারেই চলব।” “তোমার ঐ আলমারির বইগুলি কিন্তু আমি আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রাখতে চাই ।”

  • নিয়ে যান” বলে উমি চাবি দিল তার হাতে। সেতারটার দিকে একবার নীরদের চোখ পড়েছিল । দ্বিধা করে থেমে গেল ।

অবশেষে নিতান্তই কর্তব্যের অনুরোধে নীরদকে বলতে হল, “আমার কেবল একটা ভয় আছে, শশাঙ্কবাবুদের ওখানে আবার যদি তোমার যাতায়াত ঘন ঘন হতে থাকে তা হলে তোমার নিষ্ঠ যাবে দুর্বল হয়ে, কোনো সন্দেহ নেই। মনে কোরো না আমি শশাঙ্কবাবুকে নিন্দ করি। উনি খুবই ভালো লোক। ব্যবসায়ে ও রকম উৎসাহ ও রকম বুদ্ধি কম বাঙালির মধ্যেই দেখেছি। ওর একমাত্র দোষ এই যে, উনি কোনো আইডিয়ালকেই মানেন না। সত্যি বলছি, ওর জন্তে অনেক সময়ই আমার ভয় হয় ।” এর থেকে শশাঙ্কের অনেক দোষের কথাই উঠল এবং যে-সব দোষ আজ ঢাকা পড়ে আছে সেগুলো বয়সের সঙ্গে একে একে প্রবল আকারে প্রকাশ হয়ে পড়বে এই অত্যন্ত শোচনীয় দুর্ভাবনার কথা নীরদ চেপে রাখতে পারল না। কিন্তু তা হোক, তবু উনি যে খুব ভালো লোক সে কথা ও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে চায়। সেইসঙ্গে এ কথাও বলতে চায় ওর সঙ্গদোষ থেকে, ওদের বাড়ির আবহাওয়া থেকে নিজেকে বাচানো উমির পক্ষে বিশেষ দরকার। উর্মির মন ওদের সমভূমিতে যদি নেবে যায় সেটা হবে অধঃপতন ।