পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88२ * রবীন্দ্র-রচনাবলী হবে, এমনতরো উবেগের কথা সদাসর্বদা শোনা যায় না । সে-রকম কিছু প্রকাশ হলে উর্মি তার গাম্ভীর্য ভেঙে দেয়, হেসে ওঠে, মুখের ভাবখানা দেখে বলে, “আজ তোমার জুজু এসেছিল বুঝি,সেই সবুজ-পাগড়ি-পরা কোনদেশী দালাল— ভয় দেখিয়ে গেছে বুঝি।” শশাঙ্ক বিম্মিত হয়ে বলে, “তুমি তাকে জানলে কী করে।” “আমি তাকে খুব চিনি। তুমি সেদিন বেরিয়ে গিয়েছিলে, ও একলা বারান্দায় বসে ছিল। আমিই তাকে নানাকথা বলে ভুলিয়ে রেখেছিলুম। তার বাড়ি বিকানীয়রে ; তার স্ত্রী মরেছে মশারিতে আগুন লেগে, আর-একটা বিয়ের সন্ধানে আছে।”

  • তা হলে এখন থেকে হিসেব করে সে রোজ আসবে, যখন আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব । যত দিন স্ত্রীর ঠিকানা না মেলে ততদিন তার স্বপ্নটা জমবে।”
  • আমাকে বলে যেয়ো ওর কাছ থেকে কী কাজ আদায় করতে হবে। ভাব দেখে বোধ হয় আমি পারব।” &

আজকাল শশাঙ্কের মুনফার খাতায় নিরেনববইয়ের ওপারে যে মোটা অঙ্কগুলো চলৎ অবস্থায়, তারা মাঝে মাঝে যদি একটু সবুর করে সেটাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠবার মতো চাঞ্চল্য দেখা যায় না। সন্ধ্যাবেলায় রেডিয়োর কাছে কান পাতবার জন্যে শশাঙ্ক মজুমদারের উৎসাহ এত কাল অনভিব্যক্ত ছিল। আজকাল উমি যখন তাকে টেনে আনে তখন ব্যাপারটাকে তুচ্ছ এবং সময়টাকে ব্যর্থ মনে হয় না। এরোপ্লেন-ওড়া দেখবার জন্তে একদিন ভোরবেলা দমদম পর্যন্ত যেতে হল, বৈজ্ঞানিক কৌতুহল তার প্রধান আকর্ষণ নয়। নিউমার্কেটে শপিং করতে এই তার প্রথম হাতে-খড়ি । এর আগে শর্মিলা মাঝে মাঝে মাছমাংস ফলমূল শাকসবজি কিনতে সেখানে যেত। সে জানত, এ কাজটা বিশেষভাবে তারই বিভাগের। এখানে শশাঙ্ক যে তার সহযোগিতা করবে এমন কথা সে কখনো মনেও করে নি, ইচ্ছেও করে নি। কিন্তু উমি তো কিনতে যায় না, কেবল জিনিসপত্র উলটেপালটে দেখে বেড়ায়, ঘেঁটে বেড়ায়, দর করে । শশাঙ্ক যদি কিনে দিতে চায় তার টাকার ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে নিজের ব্যাগে হাজতে রাখে । শশাঙ্কর কাজের দরদ উমি একটুও বোঝে না। কখনো কখনো অত্যন্ত বাধ৷ দেওয়ায় শশাঙ্কর কাছে তিরস্কার পেয়েছে । তার ফল এমন শোকাবহ হয়েছিল যে তার শোচনীয়তা অপসারণ করবার জন্তে শশাঙ্ককে দ্বিগুণ সময় দিতে হয়েছে। এক দিকে উমির চোখে বাষ্পসঞ্চার, অন্ত দিকে অপরিহার্য কাজের তাড়া । তাই, সংকটে পড়ে অবশেষে বাড়ির বাইরে চেম্বারেই ওর সমস্ত কাজকর্ম সেরে আসতে চেষ্টা করে। কিন্তু অপরাহ্ল পেরোলেই সেখানে থাকা দুঃসহ হয়ে ওঠে। কোনো কারণে যেদিন বিশেষ দেরি করে সেদিন উর্মির অভিমান দুর্ভেদ্য মৌনের অন্তরালে দুরভিভব হয়ে ওঠে ।