পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছই বোন । 88ጫ করা কঠিন হয়ে উঠল বলেই অপরাধ প্রশ্ৰয় পেতে লাগল। বেদনায় আফিমের প্রলেপ দেবার জন্তে শশাঙ্কের সঙ্গে খেলায় আমোদে নিজেকে সর্বক্ষণ ভুলিয়ে রাখতে চেষ্ট করে। বলে, যখন সময় আসবে তখন আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে, এখন ষে-কয়দিন ছুটি ও-সব কথা থাকৃ। আবার হঠাৎ এক-এক দিন মাথা ঝাকানি দিয়ে বই খাতা ট্রাঙ্কের থেকে বের করে তার উপরে মাথা গুজে বসে। তখন শশাঙ্কর পালা। বইগুলো টেনে নিয়ে পুনরায় বাক্সজাত ক’রে সেই বাক্সর উপর সে চেপে বসে। উমি বলে, “শশাঙ্কদা, ভারি অন্যায়। আমার সময় নষ্ট কোরো না।” শশাঙ্ক বলে, “তোমার সময় নষ্ট করতে গেলে আমারও সময় নষ্ট । অতএব শোধ বোধ ।” ? তার পরে খানিকক্ষণ কাড়াকড়ির চেষ্টা করে অবশেষে উমি হার মানে । সেটা যে ওর পক্ষুে নিতান্ত আপত্তিজনক তা মনে হয় না। এইরকম বাধা পেলেও কর্তবাবুদ্ধির পীড়ন দিন পাচ-ছয় একাদিক্রমে চলে, তার পরে আবার তার জোর কমে যায়। বলে, “শশাঙ্কদা, আমাকে দুর্বল মনে কোরো না । মনের মধ্যে প্রতিজ্ঞা দৃঢ় করেই রেখেছি।” “অর্থাৎ ?” “অর্থাৎ, এখানে ডিগ্রি নিয়ে যুরোপে যাব ডাক্তারি শিখতে।” “তার পরে ?” *তার পরে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তার ভার নেব।” *আর কার ভার নেবে। ঐ-যে নীরদ মুখুজ্জে বলে একটা ইনসাফারেবল—” শশাঙ্কের মুখ চাপা দিয়ে উৰ্মি বলে, “চুপ করে। এই-সব কথা বল যদি তোমার সঙ্গে একেবারে ঝগড়া হয়ে যাবে।” নিজেকে উমি খুব কঠিন করে বলে, ‘সত্য হতে হবে আমাকে, সত্য হতে হবে।’ নীরদের সঙ্গে ওর যে সম্বন্ধ বাবা স্বয়ং স্থির করে দিয়েছেন তার প্রতি খাটি না হতে পারাকে ও অসতীত্ব বলে মনে করে । কিন্তু মুশকিল এই যে, অপর পক্ষ থেকে কোনো জোর পায় না। উমি যেন এমন একটি গাছ যা মাটিকে অঁাকড়ে আছে, কিন্তু আকাশের আলো থেকে বঞ্চিত, পাতাগুলো পাণ্ডুবর্ণ হয়ে আসে। এক-এক সময় অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে ; মনে মনে ভাবে, এ মানুষটা চিঠির মতো চিঠি লিখতে পারে না কেন । উৰ্মি অনেক কাল কনভেন্টে পড়েছে। আর-কিছু না হোক ইংরেজিতে ওর বিস্তে পাকা। সে কথা নীরদের জানা ছিল । সেইজন্যেই, ইংরেজি লিখে নীরদ ওকে অভিভূত করবে এই ছিল তার পণ । বাংলায় চিঠি লিখলে বিপদ বঁাচত, কিন্তু নিজের