পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8¢९ রবীন্দ্র-রচনাবলী কেননা এ প্রসঙ্গটা ওখানকার সকলের অপ্রিয়। আজ হাত মুঠো করে উমি স্থির করলে— ওর সকল ব্যবহারেই এই সংবাদটা জোরের সঙ্গে ঘোষণা করবে। কিছু দিন থেকে লুকিয়ে রেখেছিল এনগেজমেন্ট, আংটি। সেটা বের করে পরলে। আংটিটা নিতান্তই কম দামের— নীরদ আপন অনেস্ট, গরিবিয়ানার গর্বের দ্বারাই ঐ সস্তা আংটির দাম হীরের চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভাবখান। এই যে, আংটির দামেই আমার দাম নয়, আমার দামেই আংটির দাম ।’ নিজেকে যথাসাধ্য শোধন করে নিয়ে উর্মি অতি ধীরে লেফাফাট খুললে । চিঠিখানা পড়ে হঠাৎ লাফিয়ে উঠল। ইচ্ছা করল নাচতে, কিন্তু নাচ ওর অভ্যাস নেই। সেতারটা ছিল বিছানার উপর, সেটা তুলে নিয়ে স্থর না বেঁধেই ঝনঝন ঝংকার দিয়ে যা-ত বাজাতে লাগল। ঠিক এমন সময়ে শশাঙ্ক ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলে, “ব্যাপারখানা কী। বিয়ের দিন স্থির হয়ে গেল বুঝি ?”

  • হা শশাঙ্কদা, স্থির হয়ে গেছে।”

“কিছুতেই নড়চড় হবে না ?” “কিছুতেই না।”

  • তা হলে এইবেল সানাই বায়না দিই, আর ভীমনাগের সন্দেশ ?”

“তোমাকে কোনো চেষ্টা করতে হবে না।” “নিজেই সব করবে ? ধন্ত বীরাঙ্গন। আর, কনেকে আশীর্বাদ ?” “সে আশীর্বাদের টাকাটা আমার নিজের পকেট থেকেই গেছে।” “মাছের তেলেই মাছভাজী ? ভালো বোঝা গেল না।” “এই নাও, বুঝে দেখো ।” বলে চিঠিখানা ওর হাতে দিলে । পড়ে শশাঙ্ক হে হে করে হেসে উঠল। লিখছে : যে রিসার্চের দুরূহ কাজে নীরদ আত্মনিবেদন করতে চায় ভারতবর্ষে তা সম্ভব নয়। সেইজন্তেই ওর জীবনে আর-একটা মস্ত স্তাক্রিফাইস মেনে নিতে হল। উর্মির সঙ্গে বিবাহের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন না করলে উপায় নেই। একজন য়ুরোপীয় মহিল৷ ওকে বিবাহ করে ওর কাজে আত্মদান করতে সন্মত। কিন্তু কাজটা সেই একই, ভারতবর্ষেই করা হোক আর এখানেই । রাজারামবাবু যে কাজের জন্ত অর্থ দিতে চেয়েছিলেন তার কিয়দংশ সেখানে নিযুক্ত করলে অন্যায় হবে না। তাতে মৃতব্যক্তির পরে সম্মান করাই হবে।