পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8éఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী উর্মি উঠে বসল। বললে, “দিদি, তোমাদেরই বা কেন লোকসান হবে। আমারও তো টাকা আছে।” শৰ্মিলা বললে, ‘পাগল হয়েছিল। আমার বুঝি কিছু নেই। মথুরদাদাকে বলেছি, এই নিয়ে তিনি যেন কিছু গোল না করেন। লোকসান আমি পূরিয়ে দেব। আর, তোকেও বলছি, আমি যে কিছু জানতে পেরেছি এ কথা যেন তোর ভগ্নীপতি না টের পান ।”

  • মাপ করে, দিদি, আমাকে মাপ করো” এই বলে উমি আবার দিদির পায়ের উপর পড়ে মাথা ঠুকতে লাগল।

শমিলা চোখের জল মুছে ক্লাস্ত স্বরে বললে, “কে কাকে মাপ করবে, বোন। সংসারটা বড়ো জটিল । যা মনে করি তা হয় না, যার জন্যে প্রাণপণ করি ত৷ যায় ফেঁসে।” দিদিকে ছেড়ে উমি এক মুহূর্ত নড়তে চায় না-ওষুধপত্র দেওয়া, মাওয়ানো, খাওয়ানো, শোওয়ানো সমস্ত খুটিনাটি নিজের হাতে। আবার বই পড়তে আরম্ভ করেছে, সেও দিদির বিছানার পাশে বসে। নিজেকেও অার বিশ্বাস করে না, শশাঙ্ককেও না । ফল হল এই যে, শশাঙ্ক বারবার আসে রোগীর ঘরে। পুরুষমানুষের অন্ধতাবশতই বুঝতে পারে না ছট্‌ফটানির তাৎপর্য স্ত্রীর কাছে পড়ছে ধরা, লজ্জায় মরছে উৰ্মি। শশাঙ্ক আসে মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচের প্রলোভন নিয়ে, ব্যর্থ হয়। পেনসিলের দাগদেওয়া খবরের কাগজ মেলে দেখায় বিজ্ঞাপনে চালি চ্যাপলিনের নাম, ফল হয় না কিছুই । উমি যখন স্কুলভ ছিল না তখনো বাধার ভিতর দিয়ে শশাঙ্ক কাজকর্ম চালাতে চেষ্টা করত। এখন অসম্ভব হয়ে এল । * হতভাগার এই নিরর্থক নিপীড়নে প্রথম প্রথম শৰ্মিলা বড়ো দুঃখেও স্থখ পেত । কিন্তু ক্রমে দেখলে ওর যন্ত্রণ উঠছে প্রবল হয়ে, মুখ গেছে শুকিয়ে, চোখের নীচে পড়ছে কালি । উমি খাওয়ার সময় কাছে বসে না, সেজন্য শশাঙ্কর খাওয়ার উৎসাহ এবং পরিমাণ কমে যাচ্ছে তা ওকে দেখলে বোঝা যায় । সম্প্রতি হঠাৎ এ বাড়িতে আনন্দের ষে বান ডেকে এসেছিল সেটা গেছে সম্পূর্ণ ভাটিয়ে, অথচ পূর্বে ওদের যে একটা সহজ দিনযাত্রা ছিল সেও রইল না। একদা শশাঙ্ক নিজের চেহারার চর্চায় উদাসীন ছিল । নাপিতকে দিয়ে চুল ছাটাত প্রায় ন্যাড়া করে । আঁচড়াবার প্রয়োজন ঠেকেছিল সিকির সিকিতে । শৰ্মিল! তাই নিয়ে অনেকবার প্রবল বাগবিতগু করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ইদানীং উর্মির